Dawah wa Tablig Perfect Islamic Site based on Quran & Sahi Hadith

Usuluddin-1

পৃষ্ঠা সমূহ যাও –    
পৃষ্ঠা – ২

তৃতীয়- তাকওয়াঃ
নবী-রসূলগণ তাঁদের জাতিকে তাকওয়া তথা আল্লাহর নির্দেশাবলী পালন এবং নিষেধসমূহ পরিহার করার জন্য আদেশ করেন। তাকওয়ার অর্থ সাধারণত আল্লাহভীরুতাকে বলা হয়ে থাকে। এর অর্থ আল্লাহর আদেশ ত্যাগ করতে এবং বা নিষেধ উপেক্ষা করতে আল্লাহকে ভয় করা। অন্যভাবে বলা যেতে পারে, আল্লাহর সমস্ত আদেশ পালন ও সকল নিষেধ থেকে দূরে থাকার নাম তাকওয়া। এ সম্পর্কিত আল্লাহ তা‘আলার বাণী-
قَالَ يٰقَوْمِ إِنِّى لَكُمْ نَذِيْرٌ مُّبِيْنٌ – أَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاتَّقُوهُ وَاَطِيْعُونِ –
(ক) “তিনি (নূহ্) বললেন, নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্যে স্পষ্ট সতর্ককারী। এ বিষয় যে, তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।” [সূরা নূহ্ – ২-৩]
كَذَّبَتْ عَادُنِ الْمُرْسَلِيْنَ – اِذْ قَالَ لَهُمْ اَخُوهُمْ هُودٌ اَلَا تَتَّقُونَ – اِنِّى لَكُمْ رَسُولٌ اَمِيْنٌ – فَابَّقُوا اللهَ وَ اَطِيْعُونِ –
(খ) “আ’দ জাতি রসূগণকে মিথ্যাবাদী বলেছে। তখন তাদের ভাই হূদ তাদেরকে বললেন, তোমাদের কি ভয় নাই? আমি তোমাদের বিশ্বস্ত রসূল। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।” [সূরা শু‘আরা- ১২৩-১২৬]
كَذَّبَتْ ثَمُودُ الْمُرْسَلِيْنَ – اِذْ قَالَ لَهُمْ اَخُوهُمْ صٰلِحٌ اَلَا تَتَّقُونَ – اِنِّى لَكُمْ رَسُولٌ اَمِيْنٌ – فَاتَّقُوا اللهَ وَ اَطِيْعُونِ –
(গ) “সামূদ জাতি রসূলগণকে মিথ্যাবাদী বলেছে। যখন তাদের ভাই সালেহ, তাদেরকে বললেন- তোমরা কি ভয় কর না? আমি তোমাদের বিশ্বস্ত রসূল। অতএব, আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।” [সূরা শু‘আরা- ১৪১-১৪৪]
كَذَّبَتْ قَوْمُ لُوطِ نِ الْمُرْسَلِيْنَ – اِذْ قَالَ لَهُمْ اَخُوهُمْ لُوطٌ اَلَا تَتَّقُونَ – اِنِّى لَكُمْ رَسُولٌ اَمِيْنٌ – فَاتَّقُوا اللهَ وَ اَطِيْعُونِ –
(ঘ) “লূতের জাতি রসূলগণকে মিথ্যাবাদী বলেছে। যখন তাদের ভাই লূত, তাদেরকে বললেন- তোমরা কি ভয় কর না? আমি তোমাদের বিশ্বস্ত রসূল। অতএব, আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।” [সূরা শু‘আরা- ১৬০-১৬৩]
كَذَّبَ اَصْحٰبُ لْئَيْكَةِ الْمُرْسَلِيْنَ – اِذْ قَالَ لَهُمْ شُعَيْبٌ اَلَا تَتَّقُونَ – اِنِّى لَكُمْ رَسُولٌ اَمِيْنٌ – فَاتَّقُوا اللهَ وَ اَطِيْعُونِ –
(ঙ) “বনের অধিবাসীরা রসূলগণকে মিথ্যাবাদী বলেছে। যখন তাদের ভাই শো’আইব, তাদেরকে বললেন তোমরা কি ভয় কর না? আমি তোমাদের বিশ্বস্ত রসূল। অতএব, আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।” [সূরা শু‘আরা- ১৭৬-১৭৯]
وَلَقَدْ قَالَ لَهُمْ هٰرُونُ مِنْ قَبْلُ يٰقَوْمِ اِنَّمَا فُتِنْتُمْ بِهٖ , وَ اِنَّ رَبَّكُمُ الرَّحْمٰنُ فَتَّبِعُونِى وَاَطِيْعُوٓ اَمْرِى –
(চ) “হারূন তাদের পূর্বেই বলেছিলেনঃ হে আমার জাতি, তোমরা তো এই গো-বৎস দ্বারা পরীক্ষায় নিপতিত হয়েছ এবং তোমাদের পালনকর্তা দয়াময়। আতএব, তোমরা আমার অনুসরণ কর এবং আমার আদেশ মেনে চল।” [সূরা ত্বহা- ৯০]
وَلَمَّا جَآءَ عِيْسٰى بِالْبَىِّنٰتِ قَالَ قَدْ جِئْتُكُمْ بِلْحِكْمَةِ وَلِاُبَيِّنَ لَكُمْ بَعْضَ الَّذِى تَخْتَلِفُوْنَ فِيْهِ , فَاتَّقُوا للهَ وَاَطِيْعُونِ –
(ছ) “ঈসা যখন স্পষ্ট নিদর্শনসহ আগমন করলেন, তখন বললেন, আমি তোমাদের কাছে প্রজ্ঞা নিয়ে এসেছি এবং তোমরা যে যে বিষয়ে মতভেদ করছ তা ব্যক্ত করার জন্যে এসেছি। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার কথা মান।” [সূরা জুখরুফ- ৬৩]
وَ للهِ مَا فِى السَّمٰوٰتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ , وَلَقَدْ وَصَّيْنَا الَّذِيْنَ اُوتُوا الْكِتٰبَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَاِيَّا كُمْ اَنِ اتَّقُوا اللهَ , وَ اِنْ تَكْفُرُوا فَاِنَّ لِلّٰهِ مَا فِى السَّمٰوٰتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ , وَكَانَ اللهُ غَنِيًّا حَمِيْدً –
(জ) “আসমান ও যমিনে যা কিছু আছে সব কিছু আল্লাহ তা‘আলার, তোমার পূর্বে আমি যাদেরকে কিতাব দিয়াছিলাম তাদেরকেও আদেশ করেছিলাম এবং তোমাদেরকেও আদেশ করছি যে, তোমরা আল্লহকে ভয় কর, আর যদি তোমরা অস্বীকার কর তাহলেও আসমান ও যমিনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর, আর আল্লাহ অভাব শূন্য (সৃষ্টির অভাব পূরণের সব কিছু তাঁর আছে) প্রশংসিত।” [সূরা নিসা- ১৩১]
 
চতুর্থঃ আখেরাতঃ
নবী-রসূলগণ তাঁদের জতিকে পরকালের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন। পরকালে পুনরুত্থান, প্রতিদান ও হিসাব-নিকাশের কথা অবহিত করেন। সেই দিন এক দলের পরিণাম হবে জান্নাত আর অপর দলের পরিণাম হবে জাহান্নাম।
وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَا اِلَيْكَ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا لِّتُنْذِرَ اُمَّ الْقُرٰى وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنْذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيْهِ , فَرِيْقٌ فِى الْجَنَّةِ وَفَرِيْقٌ السَّعِيْرِ –
(ক) “এই ভাবে আমি এই আরবী কুরআ’ন আপনার উপর ওহী করি যাতে আপনি মক্কার আধিবাসিদেরকে এবং এর পার্শ্ববর্তী লোকদেরকে সেই একত্রিত হওয়ার দিবস সম্পর্কে সতর্ক করেন যাতে কোন সন্দেহ নাই, এদের কতক জন্নাতবাসী হবে আর কতক জাহান্নামবাসী হবে।” [সূরা শূরা- ৭]
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ , وَاِنَّمَا تُوَفَّوْنَ اُجُوْرَكُمْ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ , فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اٗدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ , وَمَا الْحَيٰوةُ الدُّنْيَٓا اِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ –
(খ) “প্রত্যেক প্রাণীর মৃত্যু হবে, নিশ্চই তোমরা কিয়ামতের দনি পূর্ণ প্রতিফল প্রাপ্ত হবে, এবং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে আর জান্নাতে প্রবেশ করান হবে সে সাফল্য লাভ করবে, পার্থিব জীবন কেবল খেল-তামাসা ছাড়া আর কিছু নয়।” [সূরা আল ইমরান- ১৮৫]
وَمَا الْحَيٰوةُ الدُّنْيَآ اِلَّا لَعِبٌ وَّلَهْوٌ , وَلَلدَّا رُ الْاٰخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَ , اَفَلَا تَعْقِلُونَ –
(গ) “এই পার্থিব জীবন খেল-তামাসা ছাড়া আর কিছুই নয়। যারা ভয় করে তাদের জন্য আখেরাত উত্তম, তোমাদের কি জ্ঞান হয় না?” [সূরা আন‘আম- ৩২]
مَنْ كَانَ يُرِيْدُ الْحَيٰوةَ الدُّنْيَا وَزِيْنَتَهَا نُوَفِّ اِلَيْهِمْ اَعْمَالَهُمْ فِيْهَا وَهُمْ فِيْهَا لَايُبْخَسُوْنَ – اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ لَيْسَ لَهُمْ فِى لْاَخِرَةِ اِلَّا النَّرُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيْهَا وَبٰطِلٌ مَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ –
(ঘ) “যে পার্থিব জীবন ও তাঁর চাকচিক্যই কামনা করে, আমি দুনিয়াতেই তাদের আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দেব এবং তাতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হয় না। এরাই হলো সেসব লোক আখেরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই। তারা এখানে যা কিছু করেছিল সবই বরবাদ করেছে, আর যা কিছু উপার্জন করেছিল, সবই বিনষ্ট হলো।” [সূরা হূদ- ১৫-১৬]
وَمَنْ اَرَادَ الْاٰخِرَةَ وَسَعٰى لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ كَانَ سَعْيُهُمْ مَشْكُورًا –
(ঙ) “আর যারা পরকাল কামনা করে এবং মুমিন অবস্থায় তার জন্য যথাযথ চেষ্টা-সাধনা করে, এমন লোকদের চেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে।” [সূরা বনী ইসরাঈল- ১৯]
اِنَّ الَّذِيْنَ لَايُؤْمِنُونَ بِالْاٰخِرَةِ زَيَّنَّا لَهُمْ اَعْمَالَهُمْ يَعْمَهُونَ – اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ لَهُمْ سُوْٓءُ الْعَذَابِ وَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ هُمُ الْاَخْسَرُونَ –
(চ) “যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, আমি তাদের দৃষ্টিতে তাদের কর্মকাণ্ডকে সুশোভিত করে দিয়েছি। অতএব তারা উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে মন্দ শাস্তি এবং তারাই পরকালে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত।” [সূরা নামল- ৪-৫]
تِلْكَ الدَّارُ الْاٰخِررَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِيْنَ لَايُرِيْدُونَ عُلُوًّا فِى الْاَرْضِ وَلَافَسَادًا , وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنَ –
(ছ) “সেই পরকালের বাসস্থান আমি তাদের জন্যে নির্ধারিত করি, যারা দুনিয়ার বুকে ঔদ্ধত প্রকাশ করতে ও অনর্থ সৃষ্টি করতে চায় না। আল্লাহভীরুদের জন্য শুভ পরিণাম।” [সূরা কাসাস- ৮৩]
وَمَا هٰذِهِ الْحَيٰوةُ الدُّنْيَآٰ اِلَّا لَهْوٌ وَّلَعِبٌ , وَ اِنَّ الدَّرَ الْاخِرَةَ لَحِىَ الْحَيَوَانُ , لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ –
(জ) “এই পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক ছাড়া আর কিছুই নয়। পরকালের বাসস্থানই প্রকৃত স্থায়ী জীবন, যদি তারা এটা জানত।” [সূরা আনকাবূত- ৬৪]
يٰقَوْمِ اِنَّمَا هٰذِهِ لْحَيٰوةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌ , وَّ اِنَّ الْاٰخِرَةَ هِىَ دَارُ الْقَرَارٍ –
(ঝ) “হে আমার জাতি, পার্থিব এ জীবন তো কেবল (ক্ষণস্থায়ী) উপভোগের বস্তু, আর পরকাল হচ্ছে স্থায়ী বাসস্থান।” [সূরা মুমিন- ৩৯]
زَعَمَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْٓا اَنْ لَّنْ يُبْعَثُوْا , قُلْ بَلٰى وَرَبِّىْ لَتُبْعَثُنَّ ثُمَّ لَتُنَبَّؤُنَّ بِمَا عَمِلْتُمْ , وَذٰلِكَ عَلَى اللهِ يَسِرٌ –
(ঞ) “কাফেররা দাবী করে যে, তারা কখনও পুনরুত্থিত হবে না। বলুন, অবশ্যই হবে, আমার পালনকর্তার কসম, তোমরা নিশ্চয় পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত করা হবে। আল্লাহর পক্ষে ইহা খুবই সহজ।” [সূরা তাগাবুন- ৭]
فَمَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِيْنُه فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِهُونَ – وَ مَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهٗ فَاُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ خَسِرُوٓا اَنْفُسَهُمْ فِىْ جَهَنَّمَ خٰلِدُونَ – تَلْفَحُ وُجُوْهَهُمُ النَّرُ وَهُمْ فِيْهَا كٰلِحُونَ –
(ট) “যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই সফলকাম হবে এবং যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই নিজেদের ক্ষতিসাধন করেছে, তারা জাহান্নামেই চিরকাল বসবাস করবে। আগুন তাদের মুকমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা তাতে বীভৎস আকার ধারণ করবে।” [সূরা-মুমিনূন- ১০২-১০৪]
وَ الْوَزْنُ يَوْمَئِذِنِ الْحَقُّ , فَمَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِيْهُهٗ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ – وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهٗ فَاُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْٓا اَنْفُسَهُمْ بِمَا كَانُوا بِاٰيٰتِنَا يِظْلِمُوْنَ –
(ঠ) “আর সেদিন যথার্থই ওজন হবে। অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই সফলকাম হবে। আর যাদের পাল্লা হালকা হবে, তারা এমন যে, যারা নিজেদের ক্ষতি করেছে। কেননা, তারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করত।” [সূরা আরাফ- ৮-৯]
فَاَمَّا مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِيْنُهٗ – فَهُوَ فِىْ عِيْشَةٍ رَّضِيَةٍ – وَاَمَّامَنْ خَفَّتْ مَوَزِيْنُهٗ – فَاُمُّهٗ هَاوِيَةٌ – وَمَٓا اَدْرٰىكَ مَاهِيَهْ – نَارٌ حَامِيَةٌ –
(ড) “আতএব, যার পাল্লা ভারী হবে, সে সুখী জীবন যাপন করবে। আর যার পাল্লা হালকা হবে, তার ঠিকানা হবে হাবিয়া। আপনি কি তা জানেন? তা হচ্ছে প্রজ্জ্বলিত আগুন।” [সূরা কারি‘য়া- ৬-১১]
 
ঈমান, নেফাক, কুফর ও রিদ্দাহ
 
ঈমানঃ

অভিধানিক অর্থঃ
ঈমান অর্থ বিশ্বাস করা। যে কোন ধরনের বিশ্বাসকে ঈমান বলা হয়। চাই তওহিদী বিশ্বাস হোক বা শিরকি বিশ্বাস হোক। কিন্তু পারিভাষিক অর্থে শুধুমাত্র তাওহিদী বিশ্বাসকে ঈমান বলা হয়।

ঈমানের সংজ্ঞাঃ
ঈমান হচ্ছে অন্তরে বিশ্বাস করা, জবান দ্বারা স্বীকার করা এবং সে অনুযায়ী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা কাজে বাস্তবায়ন করার নাম, যা সৎ আমলের মাধ্যমে বাড়ে এবং পাপ কাজের দ্বারা কমে।

মুমিন হলোঃ
অন্তরে বিশ্বাসকারী, মুখে স্বীকারকারী এবং সে মোতাবেক আমলকারী ও সৎ আমল করে ঈমান বৃদ্ধিকারী ও সর্বপ্রকার পাপ কাজ ত্যাগ করে ঈমানের হেফাজতকারী।

ঈমানের শাখা প্রশাখাঃ

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ الْإِيمَانُ بِضْعٌ وَ سَبْعٌ أَوْ بِضْعٌ وَ سِتُّونَ شُعْبَةً فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لَا إِلَهَ إِلَّا للهُ وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الْأَذَى عَنْ الطَّريقِ وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنْ الْإِيمَانِ -(اخرجه مسلم) –

“আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “ঈমানের ৭৩ বা ৬৩ টির বেশী শাখা-প্রশাখা রয়েছে। এর সর্বোচ্চটি হলো- লা- ইলা- হা ইল্লাল্লা- হা আর সর্বনিম্ন হলো, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া এবং লজ্জাকারাও ঈমানের একটি অঙ্গ।” [মুসলিম]

ঈমানের রোকনঃ

ঈমানের রোকন ৬টি যথা- আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর ফিরিস্তাগণ, কিতাবসমূহ, নবীরসূলগণ, শেষ দিবস ও তাকদিরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান আনা। এ সমস্ত রোকনের দলিল- আল্লাহর বাণীঃ

لَيْسَ الْبِرَّ اَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَعْرِبِ وَلٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ امَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَالْمَلٰٓئِكَةِ وَالْكِتٰبِ وَالنَّبِيٖنَ – وَاٰتَى الْمَالَ عَلٰى حُبِّهٖ ذُوِى الْقُرْبَٰى وَالْيَتٰمٰى وَالْمَسٰكِيْنَ السَّبِيْلِ –

“তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল পূর্ব বা পশ্চিম দিকে করবে তাতে পুণ্য নেই, বরং পুণ্য হলো, যে ব্যক্তি আল্লাহ, পরকাল, ফিরিস্তাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে।” [সূরা বাকারা- ১৭৭]

ভাগ্যের দলিল- আল্লাহর বাণীঃ

اِنَّا كُلَّ شَئٍ خَلَقْنَٰهُ بِقَدَرٍ –

“আমি সবকিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধরিত পরিমাপে।” [সূরা কামার- ৪৯]

সুন্নত থেকে দলিল-
হাদীসে জিবরীল [আঃ]। যখন তিনি নবী (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেন, আমাকে ঈমান সম্পর্কে খবর দেন। রসূলুল্লাহ [সাঃ] বলেন, (ঈমান হচ্ছে) “আল্লাহ, ফেরেশতাগণ, পরকাল, কিতাব, নবী-রসূগণ, শেষ দিবস ও তকদিরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান আনবে।” [বুখারী ও মুসলিম] আমাদের দেশে পুনরুত্থানকে একটি আলাদা রোকন বানিয়ে ঈমানের রোকন সাতটি বলা হয়ে থাকে। আসলে পুনরুত্থান শেষ দিবসের প্রতি ঈমানেরই অন্তর্ভুক্ত। অনেকে মনে করেন ঈমানের ৬টি রোকন কি তার নাম জেনে নেওয়াই যথেষ্ট। এমন ধারণা করা টা মারাত্মক ভুল। বরং রোকনগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও দাবি কি তা জানা প্রতিটি মুসলিমের প্রতি ওয়াজিব।

নেফাকঃ
(ক) আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থঃ
নেফাক শব্দটির আভিধানিক অর্থ- মোনাফেকি, কপটতা ও দ্বিমুখিতা। ইসলামি পরিভাষায়- ভিতরে কুফুরি লুকিয়ে রেখে বাহিরে ইসলাম প্রকাশ করা। মোনাফেক হলো- অন্তরের মাঝে কুফুরি গোপনকারী ও বাহিরে ইসলাম প্রকাশকারী।
 
(খ) নেফাকের প্রকারঃ
[এক] নেফাক এতেকাদীঃ

তথা আকীদা (বিশ্বাসে) নেফাকি, একে বড় নেফাকি বলে। বড় মোনাফেক ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায় এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নামের অতল তলে। বড় মোনাফেক সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

إِنَّ الْمُنَٰفِقِينَ فِى الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ – تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا –

“নিঃসন্দেহে মোনাফেকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে্। আর তোমরা তাদের কোন সাহায্যকারী কখনও পাবে না।” [সূরা নিসা- ১৪৫]

اِنَّ الْمُنَٰفِقِينَ يُخَٰدِعُونَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ , وَ اِذَاقَامُوٓااِلصَّلَٰوةِ قَامُوْا كُسَالَٰى …..

“অবশ্যই মোনাফেকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সাথে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে।” [সূরা নিসা- ১৪২]

يُخَٰدِعُونَ اللهَ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوا , وَمَا يَخْدَعُونَ اِلَّٓا اَنْفُسَهُمْ وَمَايَشْعُرُونَ – فِى قُلُوبِهِمْ مَّرَضٌ – فَزَادَهُمُ اللهُ مَرَضًا , وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيمٌ , بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ –

“তারা আল্লাহ এবং মুমিনদেরকে ধোঁকা দেয়। অথচ এতে তারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না কান্তু তারা তা অনুভব করতে পারে না। তাদের অন্তঃকরণ ব্যাধিগ্রস্ত আর আল্লাহ তাদের ব্যাধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুত তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আজাব, তাদের মিথ্যাচারের দরুন।” [সূরা বাকারা- ৯-১০]

(গ) বড় নেফাকের লক্ষণঃ

০১। রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা।
০২। রসূলুল্লাহ (সাঃ) আনিত বিধানের কিছুকে মিথ্যারোপ করা।
০৩। রসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা।
০৪। রসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর আনীত কোন বিধানের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা।
০৫। রসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর দ্বীনের পরাজয়ে আনন্দ প্রকাশ করা।
০৬। রসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর দ্বীনের বিজয়কে ঘৃণা করা।

[দুই] নেফাক আমলী তথা কাজে-

কর্মে নেফাকি। একে ছোট নেফাকি বলে। ইহা অন্তরে ঈমান থাকার পরেও কাজে-কর্মে মোনাফিকের আমল করা। এ ধরনের নেফাকি ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয় না। তবে মোনাফিক হওয়ার জন্য এক মাধ্যম। এ নেফাক ঈমানের সঙ্গে থাকতে পারে। কিন্তু যখন ছোট নেফাকি প্রকট আকার ধারণ করে তখন বড় মোনাফিক হয়ে যায়। রসূল (সাঃ) বলেন-

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍ و رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ – أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا أَوْ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنْ أَرْبَعَةٍ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنْ انِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَ إِذَا وَعَدَ أَخَلَفَ وَ إِذَا عَاهَدَ غَدَرَ وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ –

“আব্দুল্লা ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন- “যার মধ্যে চারটি জিনিস পাওয়া যাবে সে প্রকৃত মুনাফেক বলে বিবেচিত হবে। আর যার মাঝে সেগুলোর কোন একটি পাওয়া যাবে, সেটিকে ত্যাগ না করা পর্যন্ত মুনাফেকের একটি আলামত বিদ্যমান থাকবে। আর তা হলো- (১) যখন সে কথা বলে তখন মিথ্যা বলবে। (২) যখন অঙ্গিকার করবে তখন ভঙ্গ করবে। (৩) আর যখন তার নিকট কোন আমানত রাখা হবে তখন তার খেয়ানত করবে। (৪) যখন ঝগড়া করবে তখন বাজে কথা বলবে।” [বুখারী ও মুসলিম]

(ঘ) নেফাকি থেকে ভয়ঃ

ইবনে আবি মুলাইকা (রহঃ) বলেন- আমি রসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর ৩০ সাহাবী (রাঃ)- এর সাথে সাক্ষাৎ করেছি তাঁরা সকলেই নিজের উপর নেফাককে ভয় করতে। [বুখারী]

(ঙ) বড় ও ছোট নেফাকির মধ্যে পার্থক্যঃ
০১। বড় নেফাকি ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয় কিন্তু ছোট নেফাকি ইসলাম থেকে খারিজ করে না।
০২। বড়া নেফাকি হয় আকীদায় (অন্তরে) আর ছোট নেফাকি হয় আমলে (কাজে)।
০৩। বড় নেফাকি কোন মুমিন থেকে সংঘটিত হয় না। কিন্তু ছোট নেফাকি মুমিন থেকেও সংঘটিত হতে পারে।
০৪। বড় নেফাকির মোনাফিক বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তওবা করে না। আল করলেও তার তাওবা কবুলের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কিন্তু ছোট নেফাকির মোনাফিক তওবা করে ও আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন।
 
কুফুরঃ

0১। কুফুরী শব্দের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থঃ কুফুর শব্দটি আরবী শব্দ যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, ঢেকে দেওয়া গোপন করা বা অস্বীকার করা। আর ইসলামী পরিভাষায় কুফুরী হল- আল্লাহ ও তাঁর রসূলগণের প্রতি ঈমান না আনা এবং দ্বীনের কোন জিনিসকে অস্বীকার করা। ইহা ঈমানের বিপরীত কাজ। কাফির হল, আল্লাহ ও তাঁর রসূলগণ বা দ্বীনের কোন কিছুকে অস্বীকার করা।

0২। কুফুরী প্রাকারঃ কুফুরী দুই প্রকারঃ

(ক) বড় কুফুরীঃ ইহা মানুষকে মিল্লাতে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। ইহা আবার পাঁচ প্রকার-

(এক) কুফরুত্তাকযীবঃ

মিথ্যা বলে কুফুরী। আল্লাহ তা‘আলার বাণী-

وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنِ افْرَىٰ عَلَى اللهِ كَذِبًا اَوْ كَذَّبَ بِالْحَقِّ لَمَّا جَآءَهٗ , اَلَيْسَ فِى جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْكَٰفِرِينَ –

“যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা কথা গড়ে অথবা তার কাছে সত্য আসার পর তাকে অস্বীকার করে, তার কি স্মরণ রাখা উচিত নয় যে, জাহান্নামই সেসব কাফেরদের আশ্রয়স্থল হবে?” [সূরা আনকাবূত- ৬৮]

(দুই) কুফরুল্লাইবা ওয়া-ত্তাকাব্বুরঃ

সত্য জানার পরেও অহংকারবশত কুফুরী করা। আল্লাহর বাণী-

وَ اِذْ قُلْنَا لِلْمَلَٰٓئِكَةِ اسْجُدُوا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوٓا اِلَّا اِبْلِيْسَ , اَبَٰى وَاسْتَكْبَرَ , وَ كَانَ مِنَ الْكَٰفِرِينَ –

“আর যখন আমি আদমকে সিজদা করার জন্য ফিরিস্তাদেরকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলীস ব্যতীত সবাই সিজদা করল। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।” [সূরা বাকারা- ৩৪]

(তিন) কুফরুশ্শাকঃ

সন্দেহ ও ধারণাবশত কুফুরী- আল্লাহর বাণী-

وَ دَخَلَ جَنَّتَهٗ وَهُوَ ظَالِمٌ لِّنَفْسِهٖ , قَالَ مَٓا اَظُنُّ اَنْ تَبِيدَ هٰذِهٖ اَبَدً – وَّمَٓا اَظُنُّ السَّاعَةَ قَائِمَةً , وَّ لَئِنْ رُّدِدْتُّ اِلَٰى رَبِّى لَاَجِدَنَّ خَيْرًا مِّنْهَا مُنْقَلَبًا – قَالَ لَهٗ صَاحِبُهٗ وَهُوَ يُحَاوِرُهٗٓ اَكَفَرْتَ بِالَّذِيى خَلَقَكَ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُّطْفَةٍ ثُمَّ سَوَّٰىكَ رَجُلًا لَٰكِنَّا هُوَ اللهُ رَبِّى وَلَٓا اُشْرِكُ بِرَبِّٓى اَحَدً –

“নিজের প্রতি জুলুম করে সে তার বাগানে প্রবেশ করল। সে বলল- আমার মনে হয় না যে, এ বাগান কখনও ধ্বংস হয়ে যাবে। আর আমি মনে করি না যে, কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। যদি কখনও আমার পালনকর্তার কাছে আমাকে পৌঁছে দেওয়া হয়, তবে সেখানে এর চাইতে উৎকৃষ্ট পাব। তার সঙ্গী তাকে কথা প্রসঙ্গে বলল তুমি তাকে অস্বীকার করছ যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর বীর্য থেকে, অতঃপর পূর্ণাঙ্গ করেছেন মানবাকৃতিতে। কিন্তু আমি তো এ কথাই বলি, আল্লাহই আমার পালনকর্তার এবং আমি কাউকে আমার পালনকর্তার শরিক মানি না” [সূরা কাহ্ফ- ৩৫-৩৮]

(চার) কুফরুল্লাইরাজঃ

উপেক্ষা ও বর্জনকরত কুফুরী। আল্লাহ তা‘আলার বাণী-

مَا خَلَقْنَا السَّمَٰوَٰتِ وَالْاَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا اِلَّا بِالْحَقِّ وَاَجَلٍ مُّسَمًّى –

“আর কাফিররা যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে, তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।” [সূরা আহকাফ- ৩]

(পাঁচ) কুফরুন্নিফাকঃ

কপটতা করে (অন্তরে কুফুরী ও বাইরে ইসলাম) কুফুরী। আল্লাহ তা‘আলার বাণী-

ذَلِكَ بِاَنَّهُمْ اٰمَنُوا ثُمَّ كَفَرُوا فَطُبِعَ عَلَٰى قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَايَفْقَهُونَ-

“এটা এ জন্য যে, তারা বিশ্বাস করার পর পুনরায় কাফের হয়েছে। ফলে তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে।” [সূরা মুনাফিকূন- ৩]

(খ) ছোট কুফুরীঃ

এ কুফুরী কাজের দ্বারা সংঘটিত হয়। ছোট কুফুরী বলা হয় ঐ সকল পাপকে যা কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসে কুফুরী নামে উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু বড় কুফুরী পর্যন্ত পৌঁছায় না। যেমন- নেয়ামতের কুফুরী। ইহা মিল্লাতে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয় না। আল্লাহ তা‘আলার বাণী-

وَضَرَبَ اللهُ مَثَلًا قَرْيَةً كَانَتْ اٰمِنَةً مُّطْمَئِنَّةً يَّاتِيهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِنْ كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِاَنْعُمِ اللهِ فَاَذَاقَهَا اللهُ لِبَاسَ الْجُوعِ وَالْخَوْفِ بِمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ –

“আল্লাহ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন একটি জনপদের, যারা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, তথায় প্রত্যেক জায়গা থেকে আসত প্রচুর জীবনোপকরণ। অতঃপর তারা আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি কুফুরী (অকৃতজ্ঞতা) প্রকাশ করল।” [সূরা নাহল- ১১২]
নবী (সাঃ)- এর বাণী-

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ – سِبَابُ الْسُمْلِمِ فُسُوقٌ وَ قِتَالُهُ كُفْرٌ –

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেন- “মুসলিমকে গালি দেওয়া পাপ এবং হত্যা করা কুফুরী।” [বুখারী ও মুসলিম]

عَنْ اِبْنَ عُمَرَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ – مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللهِ فَقَدْ كَفَرَ أَوْ أَشْرَكَ –

“আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি- “যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে কসম করবে সে কুফুরী অথবা শিরক করল।” [তিরমিযী ও হাকেম]
আল্লাহ তা‘আলা হত্যাকারী ও হত্যায় লিপ্ত ব্যক্তিকে মুমিন বলে আখ্যায়িত করেছেন:

يٰاَيُّهَا الّذِيْنَ اٰمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِى الْقَتْلَٰى , اَلْحُرُّ بِالْحُرِّ وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَ الْاُنْثَٰى بِالْاُنْثَىٰ , فَمَنْ عُفِىَ لَهُۥ مِنْ اَخِيْهِ شَىْئٌ فَتِّبَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ وَاَدَاءٌ اِلَيْهِ بِاِحْسَانٍ – ذَٰلِكَ تَخْفِيْفٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَرَحْمَةٌ , فَمَنِ اعْتَدَٰى بَعْدَ ذَٰلِكَ فَلَهٗ عَذَابٌ اَلِيمٌ –

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করবে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আজাব।” [সূরা বাকারা- ১৭৮]

وَ اِنْ طَآئِفَتَٰنِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَاَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا , فَاِنْ بَغَتْ اِحْدَٰىهُمَاعَلَٰى الْاُخْرَٰى فَقَاتِلُوا الَّتِى تَبْغِى حَتّٰى تَفِىءَ اِلَٰى اَمْرِ اللهِ , فَاِنْ فَٓاءَتْ فَاَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَاَقْسِطُوا , اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِيْنَ –

“আর যদি মুমিনদের দু’টি দল কিতালে (যুদ্ধে) লিপ্ত হয় ………।” [সূরা হুজুরাত- ৯]

৩। বড় ও ছোট কুফুরী মধ্যে পার্থক্যঃ
(১-) বড় কুফুরী মিল্লাতে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। কিন্তু ছোট কুফুরী খারিজ করে দেয় না।
(২-) বড় কুফুরী করে তওবা ছাড়া মারা গেলে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। কিন্তু ছোট কুফুরী করলে জাহান্নামে প্রবেশ করলেও চিরস্থায়ী হবে না। আর আল্লাহ চাইলে পাপসমূহ মাফ করে সরাসরি জান্নাতে প্রবেশও করতে পারেন।
(৩-) বড় কুফুরীকারীর জান ও মাল ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য হালাল হয়ে যায়। কিন্তু ছোট কুফুরীতে তা হয় না।
(৪-) বড় কুফুরীতে লিপ্ত ব্যক্তির সঙ্গে মুমিনদের শত্রুতা করা জরুরী। তার সাথে মেলামেশা ও ভালবাসা করা হারাম, যদিও সে নিজ আত্মীয়-স্বজন হোক না কেন। কিন্তু ছোট কুফুরীতে এমনটা জরুরী না।
 

“আল্লাহ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন একটি জনপদের, যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত তথায় প্রত্যেক জায়গা থেকে আসত প্রচুর জীবনোপকরণ। অতঃপর তারা আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি কুফুরী (অকৃতজ্ঞতা) প্রকাশ করল।” [সূরা নাহল:১১২]
নবী (সাঃ) এর বাণীঃ

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمْ :: سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَ قِتَالُهُ كُفْرٌ –

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেনঃ “মুসলিমকে গালি দেওয়া পাপ এবং হত্যা করা কুফুরী।” [বুখারী ও মুসলিম]

عَنْ اِبْنَ عُمَرَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُزلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ :: مَنْ حَلَفَ بِغَيْر اللهِ فَقَدْكَفَرَ أَوْ أَشْرَكَ-

উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি- “যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে কসম করবে সে কুফুরী অথবা শিরক করল।” [তিরমিযী ও হাকেম]

আল্লাহ তা‘আলা হত্যাকারী ও হত্যায় লিপ্ত ব্যক্তিকে মুমিন বলে আখ্যায়িত করেছেনঃ
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করবে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আজাব।” [সূরা বাকারা ২ঃ১৭৮]

রিদ্দত

(ক) রিদ্দতের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থঃ প্রত্যাবর্তন ও ফিরে যাওয়া। আল্লাহ বলেন:
وَلَا تَرْتَدُّوأ عَلَىٰٓ أَدْبَارِكُمْ-
“আর পেছন দিকে প্রত্যাবর্তন করো না।” [সূরা মায়েদাঃ ২১]
ইসলামী পরিভাষায় রিদ্দত হলঃ ইসলাম থেকে বা গ্রহণের পর কুফুরীতে ফিরে যাওয়া।
মুরতাদঃ ইসলাম ত্যাগকারীকে মুরতাদ বলা হয়। আল্লাহ বলেনঃ
….. وَ مَنْ يَّرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِهٖ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَاُلَٰئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَا لُهُمْ فِى الدُّنْيَا وَ الْاٰخِرَةِ , وَ اُولَٰئِكَ اَصْحَٰبُ النَّارِ , هُمْ فِيهَا خَٰلِدُونَ ……
“তোমাদের মধ্যে যারা নিজের দ্বীন থেকে ফিরে দাঁড়াবে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর তারাই হল জাহান্নামবাসী। তথায় তারা চিরকাল বাস করবে।” [সূরা বাকারা: ২১৭]
(খ) রিদ্দতের প্রকারঃ
০১. কথার দ্বারা রিদ্দতঃ যেমন আল্লাহ কিংবা রসূল অথবা ফিরিস্তা বা কোন নবী-রসূলকে গালি-গালাজ করা। অথবা ইলমে গায়েব (কোন মাধ্যম ছাড়া অদৃশ্যের খবরাদী জানা দাবি করা বা মনে করা) কিংবা নবুয়াতী দাবি করা অথবা নুবুওয়াতের দাবিদারকে বিশ্বাস করা। এ ছাড়া আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে ডাকা ও তার নিকট যা সে করতে সক্ষম না তার সাহায্য এবং আশ্রয় কামনা করা।
০২. কাজের দ্বারা রিদ্দতঃ যেমন মূর্তি, গাছ, পাথর ও কবর ইত্যাদিকে সিজদা করা এবং এগুলোর উদ্দেশ্যে পশু-পাখী জবাই বা মান্নত করা, কুরআনের অবমাননা করা, যাদু করা ও শিখা এবং শিখানো এবং আল্লাহর বিধান ছাড়া মানব রচিত বিধান দ্বারা বিচার ফয়সালা করা বৈধ মনে করা ইত্যাদি।
০৩. আকীদা তথা বিশ্বাসে রিদ্দতঃ যেমন আল্লাহর শরিক আছে বিশ্বাস করা, অথবা ব্যভিচার, মদ, জুয়া ও সুদ ইত্যাদি হারাম জিনিসকে হালাল মনে করা। এ ছাড়া কোন হালাল জিনিসকে হারাম মনে করা কিংবা স্বালাত ইত্যাদিকে ফরয মনে না করা।
০৪. পূর্বে উল্লিখিত বিষয়ে সন্দেহ পোষণে রিদ্দতঃ যেমন শিরক, যেনা, হালাল বা হারাম জিনিস সম্পর্কে কিংবা নবী (সাঃ) বা কোন রসূলের রিসালাত বিষয়ে অথবা দ্বীন ইসলাম বা ইহা বর্তমান যুগে অনুপযোগী ইত্যাদি ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা।
 
(গ) রিদ্দত প্রমাণিত হলে যে সকল বিধান প্রযোজ্যঃ
০১। মুরতাদ হয়েছে কি না তার প্রমাণ করবেন ইসলামী আদালতের মহামান্য বিচারক। ইহা অন্য কারো দ্বারা সাব্যস্ত হবে না।
০২। পরিপূর্ণ ইসলামকে সঠিক ভাবে জানার পর ইসলাম ত্যাগ করলে মুরতাদ ধরা হবে।
০৩। মুরতাদকে তিন দিন যাবত তওবা করার সুযোগ দিতে হবে। এর মধ্যে তওবা করে ইসলামে ফিরে আসলে তা কবুল করা ও তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
০৪। মুরতাদ সাব্যস্ত হওয়ার পর তওবা করতে অস্বীকার করলে তাকে হত্যা করা ইসলামী রাষ্ট্রের উপর দায়িত্ব বর্তাবে। ইহা কোন ব্যক্তির কাজ নয়। عَنْ اِبْنَ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ : مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فَاقْتُلُوهُ – “ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি তার দ্বীন পরিবর্তন করে (মুরতাদ হয়) তাকে হত্যা কর।” [বুখারী]
০৫. মুরতাদকে তার সম্পদ ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে হবে। যদি ইসলামে ফিরে আসে তবে ফেরৎ পাবে। আর যদি তওবা না করে তবে তার সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ইসলামী রাষ্ট্রের বাইতুল মালে জমা করতে হবে।
০৬. মুরতাদ ও তার আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে উত্তরাধিকার সূত্র বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। যার ফলে একে অপরের ওয়ারিস হবে না।
০৭. মুরতাদ অবস্থায় হত্যা করা হলে বা মারা গেলে তাকে গোসল ও কাফন পরানো যাবে না এবং তার প্রতি জানাজার স্বালাত আদায় ও মুসলমানদের কবরস্থানে সমাহিত করা যাবে না। অন্য কোন স্থানে তাকে পুঁতে দিতে হবে।

পৃষ্ঠা – ২
পৃষ্ঠা সমূহে যাও –    

© 2020 - Dawah wa Tablig