Dawah wa Tablig Perfect Islamic Site based on Quran & Sahi Hadith

Masail

Pages – 1  2
Page – 1

অলী আওলিয়াদের অসীলা গ্রহণ
সংকলন: ডক্টর আব্দুস সালাম বারজাস আল আব্দুল করীম
অনুবাদক: মোহাম্মদ ইদরীস আলী মাদানী
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: আল মাকতাব আত তাআউনী লিদ দাওয়াহ ওয়া তাওইয়াতুল জালিয়াত, সালীল

সকল প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহর জন্য। সালাত ও সালাম নিবেদন করছি আমাদের সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সকল সাহাবীগণের প্রতি।

বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি ইসলাম সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকার কারণে বা ইসলাম সম্পর্কে উদাসীনতার কারণে ইসলাম ধর্মের নামে অনেক অনাচার, কুসংস্কৃতি, শিরক ও বিদআত প্রচলিত আছে ও প্রচলন ঘটছে। এর মধ্যে একটি হল, অলী আওলিয়াদের অসীলা দিয়ে দুআ-প্রার্থনা করা, তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া, তারা ভাল-মন্দ কিছু করতে পারে বলে বিশ্বাস রাখা, তাদের সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা যাবে বলে বিশ্বাস করা। এ উদ্দেশ্যে তাদের কবর যিয়ারত করা, তাদের কবর তওয়াফ করা, কবরে উরস উৎসব আয়োজন করা ইত্যাদি। অনেক মুসলিম এ সকল কাজ এ ধারনার ভিত্তিতেই করে যে, এই কবরে শায়িত অলী আওলিয়ারা আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলে আল্লাহর রহমত লাভ করা যাবে। অথবা তাদেরকে অসীলা বা মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করলে আল্লাহ আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন। তাদেরকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করতে যেয়ে তারা তার মাধ্যমে বা তার নামে বিপদ থেকে মুক্তি কামনা করে আল্লাহর কাছে। অনেকে সরাসরি তাদের কাছেই নিজেদের প্রয়োজন ও অভাব পুরণের জন্য প্রার্থনা করে। বিপদ থেকে উদ্ধার কামনা করে। তারা মনে করে এ ধরণের অসীলা গ্রহণ করতে ইসলামে নিষেধ নয়। বরং এদের অনেকে মনে করে এ ধরনের অসীলা গ্রহণ ইসলামে একটি ভাল কাজ। কিন্তু আসলে অসীলা গ্রহণ কী? এর বৈধতা কতটুকু? এ বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করার প্রয়াস পাবো ইনশাআল্লাহ।

আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই অসীলার নামে বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক এবং অত্যন্ত ভয়াবহ কাজ কর্ম চলছে, এর মাধ্যমে কেউ শির্কে পতিত হচ্ছে; আবার কেউ কেউ বিদ‘আতের বেড়াজালে আটকা পড়ে পথভ্রষ্টতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের অসীলা ধরার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোনো নির্দেশ বা খোলাফায়ে রাশেদীনের কোনো বাস্তব আমল রয়েছে কি ? না এ ধরনের কোন ওসিলার কথা ইসলামে নাই, তবে যে অসীলার কথা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন তা হলো এই যে, ﴿وَٱبۡتَغُوٓاْ إِلَيۡهِ ٱلۡوَسِيلَةَ﴾ [المائ‍دة: ٣٥] “তোমরা তার নৈকট্য অন্বেষণ কর।” [সূরা আল-মায়েদাহ:৩৫] এ অসীলা কি? অসীলা কি ভাবে গ্রহণ করতে হবে? এর ভাষা কি? অসীলার শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ: আরবদের ভাষায় তাওয়াস্সুল শব্দের কয়েকটি অর্থ হয়- একঃ তাওয়াস্সুল, অর্থঃ নৈকট্য লাভ করা, আর অসীলা অর্থ- নিকটবর্তী হওয়া। আল কামূসে বলা হয়েছেঃ نوسّل إلى الله تعالى توسيلا  এমন কাজ করেছে যার মাধ্যমে সে আল্লাহর নিকটবর্তী হয়েছে। যেমন তাওয়াস্সুল। এ অর্থই আমাদের আজকের বিষয়, তাই আলোচনা তাতেই সীমাবদ্ধ রাখব। আর শরিয়তের ভাষায় তাওয়াস্সুল বা অসীলার অর্থ সম্পর্কে আল কুরআনে দু’টি আয়াত এসেছে। প্রথমটি হলো সূরা মায়েদায়, সেখানে আল্লাহ বলেন : ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَٱبۡتَغُوٓاْ إِلَيۡهِ ٱلۡوَسِيلَةَ وَجَٰهِدُواْ فِي سَبِيلِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣٥ ﴾ [المائ‍دة: ٣٥] “হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং তার নৈকট্য অর্জন করতে সচেষ্ট হও এবং তার পথে সংগ্রাম কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” [সূরা মায়েদা/৩৫] দ্বিতীয় আয়াত সূরা ইসরায়, আল্লাহ বলেন: ﴿ قُلِ ٱدۡعُواْ ٱلَّذِينَ زَعَمۡتُم مِّن دُونِهِۦ فَلَا يَمۡلِكُونَ كَشۡفَ ٱلضُّرِّ عَنكُمۡ وَلَا تَحۡوِيلًا ٥٦ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلۡوَسِيلَةَ أَيُّهُمۡ أَقۡرَبُ وَيَرۡجُونَ رَحۡمَتَهُۥ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُۥٓۚ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحۡذُورٗا ٥٧ ﴾ [الاسراء: ٥٦، ٥٧]   “হে নবী আপনি তাদেরকে বলে দিন, আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে তোমরা উপাস্য মনে কর, তাদেরকে আহ্বান কর, তারা তোমাদের কষ্ট দূর করার ক্ষমতা রাখে না এবং তা পরিবর্তনও করতে পারেনা। যাদেরকে তারা আহ্বান করে তারা নিজেরাই তো তাদের পালন কর্তার নৈকট্য তালাশে ব্যাপ্ত যে, তাদের মধ্যে কে (আল্লাহর) বেশি নৈকট্যশীল (হবে)। তারা তাঁর রহমতের আশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে, নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার শাস্তি ভয়াবহ।” [সূরা ইসরা/ ৫৬-৫৭] এ দু’টি আয়াতে তাওয়াস্সুলের অর্থ কি ? প্রথম আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার বাণীতে অসীলার অর্থ হলো: নৈকট্য লাভ করা। আর এটাই হচ্ছে ইবনে আব্বাস, আতা, মুজাহিদ এবং ফার্রা রাদিয়াল্লাহু আনহুম এর মত। কাতাদাহ বলেন: পছন্দনীয় কাজের মাধ্যমে নৈকট্য লাভ করা। আবু উবাইদাহ বলেন: তাওয়াসাসলতু ইলাইহি অর্থাৎ “তার নিকটবর্তী হয়েছি। তিনি একটি কবিতা পাঠ করেন : إذا غفل الواشون عدنا لوَصْلنا * وعاد التصافي بيننا والوسائل  “যখন কুৎসা রটনাকারীরা গাফেল হয়ে পড়ল তখন আমরা আমাদের সম্পর্ক পুণঃপ্রতিষ্ঠায় ফিরে এলাম, আর আমাদের পরস্পরের মধ্যে ফিরে এল স্বচ্ছতা ও নৈকট্য। ইবনে যাইদ বলেছেন: অসীলা অর্থ: মহব্বত, তখন অর্থ হবে, “তারা আল্লাহর প্রিয় হয়েছে।” বস্তুত: এগুলো কোনো পরস্পর বিরোধী অর্থ নয়, বরং শব্দের পার্থক্য মাত্র, কেননা “আল্লাহর প্রিয় হওয়া তাঁর নৈকট্য লাভেরই একটি প্রকার।” মোটকথা: আল্লাহর বাণী  وابتغوا إليه الوسيلة এর মধ্যকার ‘অসীলা’ শব্দটির অর্থ: তোমরা আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ কর। এ অর্থে মুফাস্সিরিনদের মাঝে কোনো মতভেদ নেই, যেমন ইবনে কাছীর রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেছেন। আর দ্বিতীয় আয়াত, আল্লাহর বাণী يبتغون إلى ربهم الوسيلة  এর মধ্যকার ‘অসীলা’ শব্দটির অর্থ: ‘তারা আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করে।’ যেমন তাফসীরে জালালাইনসহ ও অন্যান্য তাফসীরে এসেছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, শরিয়তের পরিভাষায় এবং আরবদের ভাষায় অসীলা হলো: নিকটবর্তী হওয়া, নৈকট্যলাভ করা। এ থেকে জানা গেল যে, কিছু কিছু লোক ‘অসীলা’ শব্দের ব্যাখ্যায় ভুল করে থাকে, যার কারণে মুসলিমদের বিশ্বাসে মহা অনিষ্টতা তৈরী হয়েছে। আল্লামা শানকিতি (রহমতুল্লাহি আলাই্হি) বলেছেন: কিছু সুফিবাদী সূরা মায়েদার আয়াতে অসীলার যা ব্যাখ্যা করেছে তা হলো এই: (একজন আলেম, যিনি কোনো ব্যক্তি এবং আল্লাহর মাঝে মাধ্যম হবে ) এটি একটি পথভ্রষ্টতা, প্রকাশ্য অপবাদ এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের উপর অজানা কথা আরোপ করা। আবার কিছু লোক ধারণা করে যে, ‘অসীলা’ হলো: নবী রাসূল, সৎলোক এবং অলীগণের সত্ত্বা। এ সবই বাতিল, এর কোনোই ভিত্তি নেই। সাহাবা এবং তাবে‘ঈনদের তাফসীর থেকে প্রমাণিত হয় যে, কোনো আলেমের দ্বারা অসীলার ব্যাখ্যা করা মারাত্মক ভুল যা শরিয়ত কখনো মেনে নিবেনা এবং স্বীকৃতিও দিবেনা। কেননা সালাফগণ সকলেই একমত যে, আল্লাহ তা‘আলার বাণী وابتغوا إليه الوسيلة  এ আয়াতে অসীলার অর্থ হলো: আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করা। এমনিভাবে তাঁর বাণী يبتغون إلى ربهم الوسيلة  তে ও একই অর্থ।

সত্যিকার অসীলা হল, আল্লাহ তাআলার আনুগত্য ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণের মাধ্যমে সৎকর্ম করা আর নিষিদ্ধ ও হারাম কথা-কর্ম থেকে বেঁচে থাকা। আর নেক আমল সম্পাদন করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা হল সত্যিকার অসীলা। তা ছাড়া আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ ও গুণাবলির মাধ্যমে অসীলা গ্রহণের কথা আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন কিন্তু মৃত অলী আওলিয়াদের কবরের কাছে যাওয়া, কবর তওয়াফ করা, কবরে-মাজারে মানত করা, কবরে শায়িত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা, তার কাছে নিজের অভাব অভিযোগের কথা বলা ইত্যাদি কাজ-কর্মের মাধ্যমে অসীলা গ্রহণ শুধু নিষিদ্ধই নয় বরং এগুলো শিরক ও কুফরী এগুলোতে কেহ লিপ্ত হলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। এ গেল মৃত অলী আওলিয়াদের অসীলা গ্রহণ সম্পর্কে। আবার অনেকে জীবিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে নাজায়েয অসীলা গ্রহণ করে থাকে। তাদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে থাকে। যেমন গরু, ছাগল, মুরগী জবেহ করার সময় বলে থাকে: আমাদের পীর সাবের নামে বা আমার বাবার নামে জবেহ করলাম। অথবা নিজের পীর বা পীরের পরিবারের লোকদের সম্মানের জন্য সেজদা করে থাকে। এগুলো সবই শিরক এবং শিরকে আকবর বা বড় শিরক। অনেকে নিজের জীবিত পীর ফকীরদের সম্পর্কে ধারনা করে থাকে যে, আল্লাহ তাআলার সাথে তার বিশেষ যোগাযোগ বা সম্পর্ক আছে, তাই তার মাধ্যমে আল্লাহকে পাওয়া যাবে, এটাও শিরক যারা একদিন লাত উজ্জা প্রভৃতি দেব-দেবীর পূজা করতো, তারা কিন্তু এ বিশ্বাস করতো না যে এগুলো হল তাদের প্রভূ বা সৃষ্টিকর্তা। বরং তারা বিশ্বাস করতো এগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে বা তাদেরকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করে তারা আল্লাহ নৈকট্য অর্জন করবে। তারা এটাও বিশ্বাস করতো না যে, এ সকল দেব-দেবী বৃষ্টি দান করে বা রিযক দান করে। তারা বলতো : مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى. আমরা তো তাদের ইবাদত করি এ জন্য যে তারা আমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। (সূরা যুমার, আয়াত ৩) তারা এ সম্পর্কে আরো বলতো : شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ هَؤُلَا (দেব-দেবী) আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে শুপারিশ করবে। (সূরা ইউনূস, আয়াত ১৮) দেখা গেল তারা এ অসীলা গ্রহণের কারণেই শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়লো। আর এ শিরকের বিরুদ্ধে তাওহীদের দাওয়াতের জন্যই আল্লাহ তাআলা রাসূলগণকে পাঠালেন যুগে যুগে, প্রতিটি জনপদে। এ সকল দেব-দেবীর কাছে যেমন প্রার্থনামূলক দুআ করা শিরক তেমনি সাহায্য প্রার্থনা করে দুআ করাও শিরক। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِهِ فَلَا يَمْلِكُونَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنْكُمْ وَلَا تَحْوِيلًا.  বল, তাদেরকে ডাক, আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে (উপাস্য) মনে কর। তারা তো তোমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার ও পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে না। (সূরা ইসরা, আয়াত ৫৬) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ  قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَمَا لَهُمْ فِيهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَمَا لَهُ مِنْهُمْ مِنْ ظَهِيرٍ ﴿22﴾ وَلَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ. (سبأ : 22-23)  বল, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ইলাহ মনে করতে তাদেরকে আহবান কর। তারা আসমানসমূহ ও যমীনের মধ্যে অণু পরিমাণ কোন কিছুর মালিক নয়। আর এ দুয়ের মধ্যে তাদের কোন অংশীদারিত্ব নেই এবং তাদের মধ্য থেকে কেউ তাঁর সাহায্যকারীও নয়। আর আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন সে ছাড়া তাঁর কাছে কোন সুপারিশ কোন কাজে আসবে না। (সূরা সাবা, আয়াত ২২-২৩) এ সকল আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বললেন: আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাকা হয়, যাদের কাছে দুআ-প্রার্থনা করা হয় তারা অনু পরিমাণ বস্তু সৃষ্টি করতে পারে না। তারা কোন সৃষ্টি জীবের সামান্য কল্যাণ করার ক্ষমতা রাখে না। তারা আশ্রয় প্রার্থনাকারীকে কোন আশ্রয় দেয়ার সামর্থ রাখে না নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরকে মসজিদ বানাতে নিষেধ করেছেন। কবরের কাছে নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন। কবরকে সেজদা দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি ওফাতের সময়ও বলেছেন: আল্লাহ তাআলা ইহুদী ও খৃষ্টানদের অভিসম্পাত করুন। তারা নবীদের কবরকে ইবাদতের স্থান হিসাবে গ্রহণ করেছে। আর ইবাদত-বন্দেগীর দ্বারা কবরকে সম্মান করা হল শিরকে লিপ্ত হওয়ার একটি রাস্তা। এভাবে কবরকে পূজা করার মাধ্যমেই মানুষ মূর্তি পূজার দিকে ধাবিত হয় ওমর রা. দুআর সময় আব্বাস রা. কে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন, এ বিষয়টি দিয়ে অনেকে মৃত ব্যক্তির অসীলা গ্রহণ করার বৈধতা দেয়ার প্রয়াস পান। কিন্তু ওমর রা. আব্বাস রা. এর দুআকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করেছেন তার ব্যক্তিত্বকে নয়। আর আব্বাস রা. তখন জীবিত ছিলেন। যে কোন জীবিত ব্যক্তির দুআকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করা যায়। ওমর রা. তা-ই করেছেন। তিনি বলেছেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবিত থাকাকালে আমরা তার অসীলা দিয়ে দুআ করতাম। এখন তিনি নেই তাই আমরা তার চাচা আব্বাসকে দুআ করার ক্ষেত্রে অসীলা হিসাবে নিলাম। ওমর রা. এর এ বক্তব্যে স্পষ্ট হল যে, তিনি কোন মৃত ব্যক্তিকে দুআর সময় অসীলা হিসাবে গ্রহণ বৈধ মনে করতেন না। তিনি নবী হলেও না বিষয়টা এমন, যেমন আমরা কোন সৎ-নেককার ব্যক্তিকে বলে থাকি, আমার জন্য দুআ করবেন। কোন আলেম বা বুযুর্গ ব্যক্তির মাধ্যমে আমরা নিজেদের জন্য দুআ করিয়ে থাকি। এটাও এক ধরণের অসীলা গ্রহণ। এটা বৈধ। কিন্তু কোন বুযুর্গ ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তাকে অসীলা করে দুআ করা, দুআর সময় তার রূহের প্রতি মনোনিবেশ করা (যেমন অনেকে বলে থাকে আমি আমার দাদাপীর অমুকের দিকে মুতাওয়াজ্জুহ হলাম), তার থেকে ফয়েজ-বরকত লাভের ধারনা করা, এগুলো নিষিদ্ধ ও শিরক। মৃত ব্যক্তি যত মর্যাদাবান বুযুর্গ হোক সে কারো ভাল-মন্দ করার ক্ষমতা রাখে না। যখন সে মৃত্যুর পর নিজের জন্য ভাল মন্দ কিছু করতে পারে না, তখন অন্যের জন্য কিছু করতে পারার প্রশ্নই আসে না। সে কারো দুআ কবুলের ব্যাপারে কোন ভূমিকা রাখতে পারে না। কাউকে উপকার করার বা বিপদ থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতা তার থাকে না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্টভাবে বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তি নিজের কোন উপকার করতে পারে না। তিনি বলেছেন : মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু তিনটি কাজের ফল সে পেতে থাকে। ১. ছদকায়ে জারিয়াহ (এমন দান যা থেকে মানুষ অব্যাহতভাবে উপকৃত হয়ে থাকে) ২. মানুষের উপকারে আসে এমন ইলম (বিদ্যা) ৩. সৎ সন্তান যে তাঁর জন্য দুআ করে। বর্ণনায়: (মুসলিম)

হাদীসটির মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানা গেল মৃত ব্যক্তি জীবিত ব্যক্তিদের দুআ, ক্ষমা প্রার্থনার ফলে উপকার পেতে পারে। কিন্তু জীবিত ব্যক্তিরা মৃতদের থেকে এরূপ কিছু আশা করতে পারেনা। যখন হাদীস থেকে প্রমাণিত হল যে, কোন আদম সন্তান যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। সে মৃত্যুর পর কোন আমল করতে পারে না তাই মৃত্যুর পর তার আমলের বা তার দ্বারা কোন উপকার লাভের প্রশ্নই আসে না, তখন আমরা কিভাবে বিশ্বাস করি যে, অমুক ব্যক্তি কবরে জীবিত আছেন? তার সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়? তিনি আমাদের উপকার করতে পারেন? আমাদের প্রার্থনা শুনেন ও আল্লাহর কাছে শুপারিশ করেন? এগুলো সব অসার বিশ্বাস। এগুলো যে শিরক তাতে কোন সন্দেহ নেই। মৃত ব্যক্তিরা যে কবরে শুনতে পায় না, কেহ তাদেরকে কিছু শুনাতে পারে না এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন। তিনি নবীকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ إِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَى وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ. নিশ্চয় তুমি মৃতকে শোনাতে পারবে না, আর তুমি বধিরকে আহবান শোনাতে পারবে না। (সূরা নামল, আয়াত ৮০) যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মৃতকে কিছু শোনাতে পারেন না, তখন সাধারণ মানুষ কিভাবে এ অসাধ্য সাধন করতে পারে? কাজেই আমরা মৃতদের কবরে যেয়ে যা কিছু বলি, যা কিছু প্রার্থনা করি তা তারা কিছুই শুনতে পায় না। যখন তারা শুনতেই পায় না, তখন তারা প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কিভাবে কবুল করবে? কিভাবে তাদের হাজত-আকাংখা পূরণ করবে? আল্লাহ তাআলা ব্যতীত যা কিছুর উপাসনা করা হয়, তা সবই বাতিল। আল্লাহ তাআলা বলেন: وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ ﴿106﴾ وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ يُصِيبُ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ ﴿107﴾ (يونس) আর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে ডেকো না, যা তোমার উপকার করতে পারে না এবং তোমার ক্ষতিও করতে পারে না। অতএব তুমি যদি কর, তাহলে নিশ্চয় তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন ক্ষতি পৌঁছান, তবে তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে তাঁর অনুগ্রহের কোন প্রতিরোধকারী নেই। তিনি তার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা তাকে তা দেন। আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু (সূরা ইউনূস, আয়াত ১০৬-১০৭) এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাকা হয়, যাদের কাছে দুআ-প্রার্থনা করা হয় তা সবই বাতিল। আরো স্পষ্ট হল যে, এগুলো কাউকে উপকার করতে পারে না বা ক্ষতি করতে পারে না। যখন তারা সবই বাতিল, তাদের কাছে দুআ-প্রার্থনা করলে যখন কোন উপকার হয় না তখন কেন তাদের স্মরণাপন্ন হবে? কেন তাদেরকে অসীলা গ্রহণ করা হবে? কেন তাদের কবরে যেয়ে দুআ করা হবে? অনেক বিভ্রান্ত লোককে বলতে শুনা যায়, অমুক অলীর মাজার যিয়ারত করতে গিয়েছিলাম। সেখানে যেয়ে এই দুআ করেছিলাম। দুআ কবুল হয়েছে, যা চেয়েছিলাম তা পেয়ে গেছি ইত্যাদি। এ ধরনের কথা-বার্তা আল্লাহ তাআলার প্রতি মিথ্যারোপের শামিল। এমন হতে পারে- কোন ব্যক্তি অলী আওলিয়াদের মাজারে গিয়ে কিছু চাইল পরবর্তীতে দেখাগেল সে তা পেয়েগেল। কিন্তু বিষয়টি ওলী আওলিয়াদের কবরে গিয়ে তাদের কাছে চাওয়ার কারণে তারা যে পেয়েছে এমন নয় বরং প্রার্থীত বিষয় যদি শয়তানকে আল্লাহ তা’আলা যা দিয়েছেন তার অন্তুর্ভুক্ত হয় তাহলে শয়তানই তা দান করেছে। যাতে শিরকের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হয়। যা সে চেয়েছে শয়তান সেগুলো তাকে দিয়েছে। কেননা যে সকল স্থানে আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্যের ইবাদত করা হয় সে সকল স্থানে শয়তান বিচরণ করে। যখন শয়তান দেখল কোন ব্যক্তি কবর পূজা করছে, তখন সে তাকে সাহায্য করে থাকে। যেমন সে সাহায্য করে মূর্তিপূজারীদের। সে তাদের এ সকল শিরকি কাজগুলোকে তাদের কাছে সুশোভিত করে উপস্থাপন করে থাকে বলে আল্লাহ তাআলা আল কুরআনে বহু স্থানে উল্লেখ করেছেন। এমনিভাবে শয়তান গণক ও জোতিষিদের সাহায্য করে থাকে তাদের কাজ-কর্মে। এমনিভাবে শয়তান মানুষের আকৃতি ধারণ করে বিপদগ্রস্ত মানুষকে বলে থাকে অমুক মাজারে যাও, তাহলে কাজ হবে। পরে সে যখন মাজারে যায় তখন শয়তান মানুষের রূপ ধারণ করে তার সাহায্যে এগিয়ে আসে। ফলে বিপদে পড়া মানুষটি মনে করে মাজারে শায়িত অলী তাকে সাহায্য করেছে। এমনিভাবে শয়তান মানব সমাজে শিরকের প্রচলন ঘটিয়েছে ও শিরকের প্রসার করে যাচ্ছে। দুই. আর যদি প্রার্থীত বিষয়টি এমন হয় যা পুরণ করা শুধু আল্লাহ তাআলার পক্ষেই সম্ভব, তাহলে বুঝতে হবে এ বিষয়টি অর্জনের কথা তাকদীরে আগেই লেখা ছিল সে ভাবেই আল্লাহ তাকে দান করেছেন। কবরে শায়িত ব্যক্তির বরকতে এটির অর্জন হয়নি। তাই সকল বিবেকসম্পন্ন মানুষকে বুঝতে হবে যে মাজারে যেয়ে দুআ করলে কবুল হয় বলে বিশ্বাস করা সর্বাবস্থায়ই কুসংস্কার ও বড় শিরক। কেহ যদি মাজারে যেয়ে দুআ প্রার্থনা করে, মাজার পূজা করে মানুষ থেকে ফেরেশতাতে পরিণত হয় তাহলেও বিশ্বাস করা যাবে না যে, এটা মাজারে শায়িত অলীর কারণে হয়েছে। এর নামই হল ঈমান। এর নামই হল নির্ভেজাল তাওহীদ। তাওহীদের বিশ্বাস যদি শিরকমিশ্রিত হয়, কু সংস্কারাচ্ছন্ন হয় তা হলে ব্যক্তির মুক্তি নেই। কাল্পনিক কারামত অনেক মানুষই মুজিযা আর কারামতের পার্থক্য জানে না। মুজিযা আর কারামত কি তা বুঝে না। মুজিযা হল এমন অলৌকিক বিষয় যা নবীদের থেকে প্রকাশ পায়। আর কারামত হল এমন অলৌকিক বিষয় যা আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দাদের থেকে প্রকাশ পায়। মুজিযা প্রকাশের শর্ত হল নবী বা রাসূল হওয়া। আর কারামত প্রকাশের শর্ত হল নেককার ও মুত্তাকী হওয়া। অতএব যদি কোন বিদআতী পীর-ফকির বা শিরকে লিপ্ত ব্যক্তিদের থেকে অলৌকিক কিছু প্রকাশ পায় সেটা মুজিযাও নয়, কারামতও নয়। সেটা হল দাজ্জালী ধোকা-বাজি বা প্রতারণা। অনেক অজ্ঞ লোক ধারনা করে থাকে মুজিযা বা কারামত, সাধনা বা চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে অর্জন করা যায়। বা মানুষ ইচ্ছা করলেই তা করতে পারে। তাই এ সকল অজ্ঞ লোকেরা ধারনা করে অলী আউলিয়াগণ ইচ্ছা করলে কারামতের মাধ্যমে অনেক কিছু ঘটাতে পারেন, বিপদ থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে পারেন। কিন্তু আসল ব্যাপার হল, কারামত কোন ব্যক্তির ইচ্ছাধীন নয়। এটি একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাধীন। মানুষ ইচ্ছা করলে কখনো কারামত সংঘটিত করতে পারে না, সে যত বড় অলী বা পীর হোক না কেন। কোন বিবেকমান মানুষ বিশ্বাস করে না যে, একজন মানুষের প্রাণ চলে যাওয়ার পর তার কিছু করার ক্ষমতা থাকে। আবার যদি সে কবরে চলে যায় তাহলে কিভাবে সে কিছু করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে? এ ধরনের কথা তারাই বিশ্বাস করতে পারে অজ্ঞতার ক্ষেত্রে যাদের কোন নজীর নেই। অলী তো দূরের কথা কোন নবীর কবরও পূজা করা জায়েয নেই। নবীর কবরতো পরের কথা, জীবিত থাকা কালে কোন নবীর ইবাদত করা, বা তাকে দেবতা জ্ঞান করে পূজা করা যায় না। এটা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُؤْتِيَهُ اللَّهُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُوا عِبَادًا لِي مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلَكِنْ كُونُوا رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُونَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنْتُمْ تَدْرُسُونَ ﴿79﴾ وَلَا يَأْمُرَكُمْ أَنْ تَتَّخِذُوا الْمَلَائِكَةَ وَالنَّبِيِّينَ أَرْبَابًا أَيَأْمُرُكُمْ بِالْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ﴿80﴾. (آل عمران) কোন মানুষের জন্য সংগত নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, হিকমত ও নবুওয়াত দান করার পর সে মানুষকে বলবে, তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমার ইবাদতকারী হয়ে যাও। বরং সে বলবে, তোমরা রব্বানী(আল্লাহ ভক্ত) হও। যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে। আর তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ করেন না যে, তোমরা ফেরেশতা ও নবীদেরকে প্রভূ রূপে গ্রহণ কর। তোমরা মুসলিম হওয়ার পর তিনি কি তোমাদেরকে কুফরীর নির্দেশ দেবেন? (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৭৯-৮০) মুশরিকদের অবস্থা : অতীত ও বর্তমান যারা কবর মাযার পূজা করে তারা বলে থাকে যে, মুশরিকরা মূর্তি পূজা করত। আমরাতো মূর্তি পূজা করি না। আমরা আমাদের পীর দরবেশদের মাজার জিয়ারত করি। এগুলোর ইবাদত বা পূজা করি না। তাদের অসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ-প্রার্থনা করি যেন আল্লাহ তাদের সম্মানের দিকে তাকিয়ে আমাদের দুআ-প্রার্থনা কবুল করেন। এটাতো কোন ইবাদত নয়। এদের উদ্দেশ্যে আমরা বলব, মৃত ব্যক্তির কাছে সাহায্য ও বরকত কামনা করা সত্যিকারার্থে তার কাছে দুআ করার শামিল। যেমন ইসলামপূর্ব জাহেলী যুগে পৌত্তলিকরা মূর্তির কাছে দুআ-প্রার্থনা করত। তাই জাহেলী যুগের মূর্তি পূজা আর বর্তমান যুগের কবর পূজার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এ দুটো কাজই লক্ষ্য উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে এক ও অভিন্ন। যখন জাহেলী যুগের মুশরিকদের বলা হল তোমরা কেন মূর্তিগুলোর ইবাদত করো? তারাতো কিছু করার ক্ষমতা রাখে না। তখন তারা ইবাদতের বিষয়টি অস্বীকার করত এবং বলতঃ إِلَى اللَّهِ زُلْفَى مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا. আমরা তো তাদের ইবাদত করি না, তবে এ জন্য যে তারা আমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। (সূরা যুমার, আয়াত ৩) এমনিভাবে আমাদের সমাজের কবরপূজারীরাও বলে থাকে যে, আমরা তো কবরে শায়িত অলীর ইবাদত করি না। তার কাছে দুআ করি না। আমাদের উদ্দেশ্য শুধু এই যে, তারা আল্লাহর কাছে প্রিয়। তাদের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ অর্জন করা যাবে। এ সকল অলীগণকে আমরা আমাদের ও আল্লাহ তাআলার মধ্যে মাধ্যম মনে করে থাকি। কাজেই পরিণতির দিক দিয়ে জাহেলী যুগের মুশরিকদের মূর্তি পূজা আর বর্তমান যুগের মুসলমানদের কবর পূজা এক ও অভিন্ন। দুটো একই ধরনের শিরক। মুহাব্বাত ভালোবাসার ক্ষেত্রে শিরক অন্তরের একাগ্র ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আল্লাহ ব্যতীত আর কোন সৃষ্টি পেতে পারে না। এই নির্ভেজাল শ্রদ্ধাপূর্ণ ভালোবাসা হল একটি ইবাদত। যারা মনে করে আমরা এই কবরের অলী ও বুযুর্গদের অত্যাধিক ভালোবাসি, তাদের শ্রদ্ধা করি, তাদের সম্মান করি তাহলে এটিও একটি শিরক। আর এই মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার কারণেই তারা অলী-বুযুর্গদের কবরে মানত করে, কবর প্রদক্ষিণ করে, কবর সজ্জিত করে, কবরে ওরস অনুষ্ঠান করে। কবরবাসীর কাছে তারা সাহায্য চায়, উদ্ধার কামনা করে। যদি কবরওয়ালার প্রতি মাত্রাতিরিক্ত সম্মান ও ভালোবাসা না থাকতো, তাহলে তারা এগুলোর কিছুই করত না। আর এ ধরনের ভালোবাসা শুধু আল্লাহর তাআলার জন্যই নিবেদন করতে হয়। আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য নিবেদন করা শিরক। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آَمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ. وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, আল্লাহকে ভালবাসার মত তাদেরকে ভালবাসে। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালবাসায় দৃঢ়তর। (সূরা আল বাকারা, আয়াত ১৬৫) দৃঢ়তর, সত্যিকার ও সার্বক্ষণিক ভালোবাসা একমাত্র আল্লাহ তাআলার প্রাপ্য। এটা অন্যকে নিবেদন করলে শিরক হয়ে যাবে। মুশরিক পৌত্তলিকরা তাদের দেব-দেবীর জন্য এ রকম ভালোবাসা পোষণ করে থাকে। আল্লাহ মানুষের খুবই কাছে। মানুষ আল্লাহর কাছে তার প্রার্থনা পৌছে দিতে মাধ্যম বা অসীলা খোঁজে। কিন্তু কেন? আল্লাহ তাআলা কি মানুষ থেকে অনেক দূরে? আর মাজারে শায়িত সে সকল পীর অলীগণ মানুষের কাছে কি আল্লাহর চেয়েও নিকটে? কখনো নয়। একজন মানুষ যখন প্রার্থনা করে তখন সকলের আগেই তারা সরাসরি আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। আল কুরআনে আল্লাহ তাআলা নিজে বলেছেনঃ وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ. (البقرة : 186) আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি প্রার্থনাকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৬)

মানুষ সরাসরি আল্লাহ তাআলার কাছে তার সকল প্রার্থনা নিবেদন করবে কোন মাধ্যম ব্যতীত। এটাই ইসলামের একটি বৈশিষ্ট ও মহান শিক্ষা। আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ-প্রার্থনায় কোন মাধ্যম গ্রহণ করার দরকার নেই মোটেই। দুআ-প্রার্থনায় মাধ্যম বা অসীলা গ্রহণ একটি বিজাতীয় বিষয়। হিন্দু, বৌদ্ধ খৃষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মের লোকেরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে মূর্তি, পাদ্রী ও ধর্মযাজকদের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। এ দিকের বিবেচনায় এটি একটি কুফরী সংস্কৃতি, যা কোন মুসলমান অনুসরণ করতে পারে না। দুআ-প্রার্থনায় আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য সৎকর্মসমূহকে অসীলা হিসাবে নেয়া যায়। তেমনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নামসমূহ অসীলা হিসাবে নেয়ার জন্য আল-কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ. (الأعراف : 180) আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামের মাধ্যমে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়। তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হবে। (সূরা আল আরাফ, আয়াত ১৮০) সর্বশেষে বলতে চাই, যারা এ ধরনের অন্যায় অসীলা গ্রহণের মাধ্যমে শিরকে লিপ্ত হচ্ছেন তারা এর থেকে ফিরে আসুন। আমাদের দায়িত্ব কেবল সত্য বিষয়টি আপনাদের কাছে পৌঁছে দেয়া। এ সকল অসীলা নি:সন্দেহে শিরক। আর শিরক এমন এক মহা-পাপ যা আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। যে এ শিরকে লিপ্ত হবে জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ. (المائدة : 72) নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মায়েদা, আয়াত ৭২) তাই আমাদের জন্য একান্ত কর্তব্য হল, আমাদের সকল ইবাদত-বন্দেগী, দুআ-প্রার্থনা নির্ভেজালভাবে একমাত্র এক আল্লাহ তাআলার জন্য নিবেদন করা। তিনি যা করতে বলেছেন আমরা তাই করবো। নিজেরা কিছু উদ্ভাবন করবো না। তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের যেভাবে প্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন আমরা সেভাবেই প্রার্থনা করবো। তিনি যেভাবে অসীলা গ্রহণ অনুমোদন করেছেন, আমরা সেভাবে অসীলা গ্রহণ করবো। এর ব্যতিক্রম হলে আমরা ইসলাম থেকে দূরে চলে যাবো। কাজেই সর্বক্ষেত্রে আমাদের কর্তব্য হবে কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুসরণ করা। যদি আমরা এভাবে চলতে পারি তবে দুনিয়াতে কল্যাণ আর আখেরাতে চিরন্তন সুখ ও সফলতা লাভ করতে পারবো। অন্যথা, উভয় জগতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবো। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে শিরক থেকে হেফাজত করুন। আ-মীন!

বৈধ ও অবৈধ অসীলা
অসীলা দুই প্রকার : বৈধ ও অবৈধ। বৈধ অসীলা কি ? এবং এর দলীল কি ? অবৈধ অসীলা কি ? এবং তা নিষেধের দলীল কি ?
বৈধ অসীলা : বৈধ অসীলা : আমরা জানি যে, আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আমরা যেন একমাত্র তারই ইবাদত করি এবং তার সহিত যেন কাউকে অংশিদার না করি। দো‘আ একটি বড় ইবাদত, যা অন্য কারো জন্য করা জায়েয নেই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ ﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِي سَيَدۡخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ ٦٠ ﴾ [غافر: ٦٠] “এবং আপনার প্রভু বলেন যে, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব, নিশ্চয়ই যারা আমার ইবাদত করা থেকে অহংকার করে তারা অতি সত্তর অপমাণিত লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” [সূরা গাফের/৬০] তিনি আরো বলেন: ﴿ وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [الجن: ١٨] “সকল মাসজিদ আল্লাহর জন্য, কাজেই তোমরা আল্লাহর সহিত কাউকে ডেকোনা।” [সূরা আল-জিন, ১৮] তিনি আরো বলেন: ﴿ وَأَنَّهُۥ لَمَّا قَامَ عَبۡدُ ٱللَّهِ يَدۡعُوهُ كَادُواْ يَكُونُونَ عَلَيۡهِ لِبَدٗا ١٩ قُلۡ إِنَّمَآ أَدۡعُواْ رَبِّي وَلَآ أُشۡرِكُ بِهِۦٓ أَحَدٗا ٢٠ ﴾ [الجن: ١٩، ٢٠] “আর এই যে, যখন আল্লাহর বান্দা তাঁকে ডাকার জন্যে দন্ডায়মান হলো তখন তারা তার নিকট ভিড় জমালো। বলুন, আমি তো কেবল আমার রবকে ডাকি, আমি তো তার সাথে কাউকে শরীক করি না” [সূরা জিন/১৯-২০] আল্লাহ তা‘আলা নিম্নোক্ত তিনটি পদ্ধতিতে তাকে ডাকা আমাদের জন্য বৈধ করেছেন: যা আল্লাহর কিতাব কুরআন দ্বারা প্রমাণিত অথবা তা তাঁর রাসূলের (S:)সুন্নাত দ্বারা স্বীকৃত।

তন্মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে: আল্লাহ তা‘আলার সুন্দর সুন্দর নাম, সমুন্নত গুণাবলী এবং তাঁর প্রশংসনীয় কাজের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করা। এর দলীল হলো, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿ وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ وَذَرُواْ ٱلَّذِينَ يُلۡحِدُونَ فِيٓ أَسۡمَٰٓئِهِۦۚ سَيُجۡزَوۡنَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٨٠ ﴾ [الاعراف: ١٨٠] “আর আল্লাহর জন্যে সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে, তোমরা তাঁকে সে সব নামের মাধ্যমে ডাক এবং যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তোমরা তাদেরকে বর্জন কর, সত্বরই তাদেরকে তাদের কৃত কর্মের প্রতিফল দেওয়া হবে।” [সূরা আরাফ/১৮০] সুন্দর সুন্দর নামের সদৃশ হলো সমুন্নত গুণাবলী, কারণ নাম গুণের উপর প্রমাণ বহন করে, যা থেকে তা নির্গত হয়। আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ অগণিত, কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই, যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদীস প্রমাণ করে, যা মুসনাদে ইমাম আহমদ ও অন্যান্য হাদীসে এসেছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কারো কোনো দুঃশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা আসলে সে যদি বলে: «اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ ابْنُ عَبْدِكَ ابْنُ أَمَتِكَ، نَاصِيَتِي بِيَدِكَ، مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ، عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ، أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ، سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ، أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ، أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ، أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي، وَنُورَ بَصَرِي، وَجِلَاءَ حُزْنِي، وَذَهَابَ هَمِّي، إِلَّا أَذْهَبَ اللَّهُ هَمَّهُ وَأَبْدَلَهُ مَكَانَ حُزْنِهِ فَرَحًا» “হে আল্লাহ নিঃসন্দেহে আমি তোমার দাস, তোমার দাসের পুত্র, তোমার দাসীর পুত্র, আমার ললাটের কেশ গুচ্ছ তোমার হাতে, তোমার বিচার আমার জীবনে যথার্থ, তোমার মীমাংসা আমার ভাগ্যলিপিতে ন্যায় সঙ্গত, আমি তোমার নিকট তোমার সেই নামের বিনিময়ে প্রার্থনা করছি, যে নাম তুমি নিজে নিয়েছ, বা তুমি তোমার গ্রন্থে অবতীর্ণ করেছ, বা তোমার সৃষ্টির মধ্যে কাউকে তা শিখিয়েছ, অথবা তুমি তোমার গায়বী জ্ঞানে নিজের নিকট গোপন রেখেছ, তুমি কুরআনকে আমার হৃদয়ের বসন্ত কর, আমার বক্ষের জ্যোতি কর, আমার দুশ্চিন্তা দূর করার এবং আমার উদ্বেগ চলে যাওয়ার কারণ বানিয়ে দাও।” তাহলে আল্লাহ তার দুঃশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনাকে আনন্দে পরিণত করে দেন। (মুসনাদে ইমাম আহমদ) এ হাদীসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের কথা এসেছে তাঁর সুন্দর নামসমুহের মাধ্যমে। পূর্বে নবীগণ এবং সৎলোকগণ আল্লাহর সুন্দর নাম এবং গুণাবলীর মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করতো, যেমন আল্লাহ তা‘আলা সুলাইমান আলাইহিস সালামের পক্ষ থেকে অনুরূপ নৈকট্যলাভের কথা বর্ণনা করে বলেন: ﴿ وَقَالَ رَبِّ أَوۡزِعۡنِيٓ أَنۡ أَشۡكُرَ نِعۡمَتَكَ ٱلَّتِيٓ أَنۡعَمۡتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَٰلِدَيَّ وَأَنۡ أَعۡمَلَ صَٰلِحٗا تَرۡضَىٰهُ وَأَدۡخِلۡنِي بِرَحۡمَتِكَ فِي عِبَادِكَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١٩ ﴾ [النمل: ١٩] “এবং বলল: হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে সামর্থ দিন যাতে আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি আপনি যে অনুগ্রহ করেছেন তার জন্যে এবং আমি যেন সৎকর্ম করতে পারি, যা আপনি পছন্দ করেন এবং আপনার অনুগ্রহে আমাকে আপনার সৎকর্ম পরায়ন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।” (সূরা নামল/১৯) এটি হলো গুণাবলীর মাধ্যমে নৈকট্য অর্জন। সহীহ বুখারীতে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিতেন যে, আমরা «اللهُمَّ رَبَّ السَّمَاوَاتِ وَرَبَّ الْأَرْضِ وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ، فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى، وَمُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ وَالْفُرْقَانِ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ شَيْءٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ، اللهُمَّ أَنْتَ الْأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ، اقْضِ عَنَّا الدَّيْنَ، وَأَغْنِنَا مِنَ الْفَقْرِ» “যখন আমাদের বিছানায় যাব তখন আমরা যেন বলি: হে আল্লাহ! হে ভুমণ্ডল, নভোমণ্ডল ও আরশের অধিপতি ! হে আমাদের ও সকল বস্তুর প্রতিপালক, হে তাওরাত, ইঞ্জিল ও ফুরকানের অবতারণকারী, আমি তোমার নিকট প্রত্যেক অনিষ্টকারীর অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যার ললাটের কেশ গুচ্ছ তুমি ধারণ করে আছ। হে আল্লাহ! তুমিই আদি, তোমার পূর্বে কেউ নেই এবং তুমিই সর্বশেষ, তোমার পরে কেউ নেই, তুমিই সবার উপরে, তোমার উপরে কেউ নেই, তুমিই সর্বনিকটে, তোমার চেয়ে নিকটে কেউ নেই। আমাদের পক্ষ থেকে আমাদের ঋন পরিশোধ করে দাও এবং আমাদেরকে দারিদ্র থেকে মুক্তি দিয়ে সচ্ছল করে দাও।” [ বুখারী, মুসলিম, ২৭১৩] তিরমিযীতে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: «أَلِظُّوا بِيَا ذَا الجَلَالِ وَالإِكْرَامِ» তোমরা ‘ইয়া জালজালালী অল ইকারামের মাধ্যমে বেশি করে আহ্বান করো’ [তিরমিযী, ৩৫২৫।] অর্থাৎ তা তোমাদের দো‘আর মধ্যে বেশি বেশি বলবে। মুসনাদ এবং সুনানগ্রন্থসমূহে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহিত বসা ছিলেন এবং এক ব্যক্তি পাশে নামায পড়ছিলেন, তিনি যখন রুকু, সিজদা এবং তাশাহ্হুদে দো‘আ করছিলেন তখন তিনি দো‘আতে বলেছিলেন: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدُ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْمَنَّانُ، بَدِيعُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ، يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَقَدْ دَعَا اللَّهَ بِاسْمِهِ الْعَظِيمِ، الَّذِي إِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ، وَإِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى» “হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি এ জন্য যে, সকল প্রশংসা তোমারই, তুমি ব্যতীত কোনো যোগ্য উপাস্য নেই, তুমি পরম অনুগ্রহদাতা, আকাশমণ্ডলি ও পৃথিবীর আবিস্কারক, হে মহিমাময় এবং মহানুভব, হে চিরঞ্জিবী অবিনশ্বর, আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি…..” নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথীদেরকে বললেন: তোমরা কি জান যে, সে কিসের মাধ্যমে দো‘আ করেছে? তারা বলল: আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন, তিনি বললেন: শপথ সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ, সে আল্লাহর সবচেয়ে বড় নামের মাধ্যমে দো‘আ করেছে, যার মাধ্যমে দো‘আ করলে তিনি কবুল করে থাকেন এবং কিছু চাওয়া হলে তিনি তা দিয়ে থাকেন। (এটি নাসায়ীর শব্দ)[নাসাঈ, ১৩০০; তিরমিযী, ৩৫৪৪; আবু দাউদ, ১৪৯৫; ইবন মাজাহ, ৩৮৫৮; মুসনাদে আহমাদ ১২২০৫। ] অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে তাশাহ্হুদে বলতে শুনেছেন: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ يَا أَللَّهُ بِأَنَّكَ الْوَاحِدُ الْأَحَدُ الصَّمَدُ، الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ، أَنْ تَغْفِرَ لِي ذُنُوبِي، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ (হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি, হে এক ও অদ্বিতীয়, ভরসাস্থল আল্লাহ, যিনি জনক নন জাতকও নন এবং যাঁর সমকক্ষ কেউ নেই, তুমি আমার পাপসমুহকে ক্ষমা করে দাও, নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল দয়াবান।) তিনি বললেন: তাকে ক্ষমা করা হয়েছে। কথাটি তিনবার বললেন। মেহজান ইবন আদরা থেকে নাসায়ী বর্ণনা করেছেন [ নাসায়ী, ১৩০১।] এই একটি উদাহরণ। তাছাড়া আল্লাহর সুন্দর নাম এবং সমুন্নত গুণাবলীর মাধ্যমে নৈকট্য লাভ করার বহু উদাহরণ রয়েছে। মুসলিমদের উচিৎ হলো, তারা যেন তাদের দো‘আয় এগুলো বলেন, কারণ তা দ্বারা দো‘আ করলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

দ্বিতীয়ত: দো‘আর ক্ষেত্রে বৈধ অসীলা হলো : আমাদের কৃত সৎকর্মের মাধ্যমে তাঁকে ডাকা বৈধ করেছেন। এর বহু দলীল রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে: আল্লাহ তা‘আলা বলেন: যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা তোমার প্রতি ঈমান এনেছি, কাজেই তুমি আমাদের পাপসমুহকে ক্ষমা করে দাও এবং জাহান্নামের আগুনের শাস্তি থেকে আমাদেরকে বাঁচাও। [সূরা আল ইমরান/৩৬] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: (হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি যা অবতীর্ণ করেছ তার প্রতি আমরা ঈমান এনেছি এবং রাসূলের অনুসরণ করছি। অত:এব, আমাদেরকে সাক্ষিদের সাথে লিপিবদ্ধ কর।) [সূরা আল ইমরান/ ৫৩] তিনি আরো বলেন: (হে আমাদের প্রভু, নিশ্চয়ই আমরা একজন আহ্বানকারীকে ঈমানের জন্য আহ্বান করতে শুনেছি যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনয়ন কর, তাতেই আমরা ঈমান আনলাম, হে আমাদের প্রভু, আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা কর ও আমাদের অমঙ্গলসমূহ আবৃত কর এবং পূণ্যবানদের সহিত আমাদিগকে মৃত্যু দান কর।) [সূরা আল ইমরান/ ১৯৩] তিনি আরো বলেন: (আমার বান্দাদের মধ্যে একদল লোক ছিল যারা বলতো: হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদিগকে ক্ষমা করে দাও এবং আমাদিগকে অনুগ্রহ কর, তুমিতো অনুগ্রহশীলদের শ্রেষ্ঠ অনুগ্রহশীল।) [সূরা মুমিনূন/ ১০৯] মুসনাদ এবং সুনানে আবু দাউদে বুরাইদাহ ইবন হুসাইব হতে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছেন: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ أَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ، وَلَمْ يُولَدْ، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ، فَقَالَ: «لَقَدْ سَأَلْتَ اللَّهَ بِالِاسْمِ الَّذِي إِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى، وَإِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ». (হে আল্লাহ! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি আল্লাহ, তুমি ব্যতীত কোনো যোগ্য উপাসক নেই, তুমি একক, ভরসাস্থল, যিনি জনক নন এবং জাতকও নন এবং যার সমকক্ষ কেউ নেই, এ অসীলায় আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি।) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: (সে আল্লাহর নিকট তার সব চেয়ে বড় নামের মাধ্যমে চেয়েছে, যার দ্বারা চাইলে তিনি দিয়ে থাকেন এবং দো‘আ করলে তিনি কবুল করে থাকেন [আবু দাউদ, ১৪৯৩।] । এই ব্যক্তি সৎ আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য চেয়েছে, আর সেটি হচ্ছে: ইখলাসের সাক্ষ্য প্রদান করা। এবং সে কথা, কাজ এবং বিশ্বাসে ইখলাসের উপর থাকার কারণে। অনুরূপ এর উদাহরণ গুহার অধিবাসীদের ঘটনা, যা আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, সেটি হলো: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ” انْطَلَقَ ثَلاَثَةُ رَهْطٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَتَّى أَوَوْا المَبِيتَ إِلَى غَارٍ، فَدَخَلُوهُ فَانْحَدَرَتْ صَخْرَةٌ مِنَ الجَبَلِ، فَسَدَّتْ عَلَيْهِمُ الغَارَ، فَقَالُوا: إِنَّهُ لاَ يُنْجِيكُمْ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ إِلَّا أَنْ تَدْعُوا اللَّهَ بِصَالِحِ أَعْمَالِكُمْ، فَقَالَ رَجُلٌ مِنْهُمْ: اللَّهُمَّ كَانَ لِي أَبَوَانِ شَيْخَانِ كَبِيرَانِ، وَكُنْتُ لاَ أَغْبِقُ قَبْلَهُمَا أَهْلًا، وَلاَ مَالًا فَنَأَى بِي فِي طَلَبِ شَيْءٍ يَوْمًا، فَلَمْ أُرِحْ عَلَيْهِمَا حَتَّى نَامَا، فَحَلَبْتُ لَهُمَا غَبُوقَهُمَا، فَوَجَدْتُهُمَا نَائِمَيْنِ وَكَرِهْتُ أَنْ أَغْبِقَ قَبْلَهُمَا أَهْلًا أَوْ مَالًا، فَلَبِثْتُ وَالقَدَحُ عَلَى يَدَيَّ، أَنْتَظِرُ اسْتِيقَاظَهُمَا حَتَّى بَرَقَ الفَجْرُ، فَاسْتَيْقَظَا، فَشَرِبَا غَبُوقَهُمَا، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ، فَفَرِّجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ، فَانْفَرَجَتْ شَيْئًا لاَ يَسْتَطِيعُونَ الخُرُوجَ “، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” وَقَالَ الآخَرُ: اللَّهُمَّ كَانَتْ لِي بِنْتُ عَمٍّ، كَانَتْ أَحَبَّ النَّاسِ إِلَيَّ، فَأَرَدْتُهَا عَنْ نَفْسِهَا، فَامْتَنَعَتْ مِنِّي حَتَّى أَلَمَّتْ بِهَا سَنَةٌ مِنَ السِّنِينَ، فَجَاءَتْنِي، فَأَعْطَيْتُهَا عِشْرِينَ وَمِائَةَ دِينَارٍ عَلَى أَنْ تُخَلِّيَ بَيْنِي وَبَيْنَ نَفْسِهَا، فَفَعَلَتْ حَتَّى إِذَا قَدَرْتُ عَلَيْهَا، قَالَتْ: لاَ أُحِلُّ لَكَ أَنْ تَفُضَّ الخَاتَمَ إِلَّا بِحَقِّهِ، فَتَحَرَّجْتُ مِنَ الوُقُوعِ عَلَيْهَا، فَانْصَرَفْتُ عَنْهَا وَهِيَ أَحَبُّ النَّاسِ إِلَيَّ، وَتَرَكْتُ الذَّهَبَ الَّذِي أَعْطَيْتُهَا، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ، فَافْرُجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ، فَانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ غَيْرَ أَنَّهُمْ لاَ يَسْتَطِيعُونَ الخُرُوجَ مِنْهَا “، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” وَقَالَ الثَّالِثُ: اللَّهُمَّ إِنِّي اسْتَأْجَرْتُ أُجَرَاءَ، فَأَعْطَيْتُهُمْ أَجْرَهُمْ غَيْرَ رَجُلٍ وَاحِدٍ تَرَكَ الَّذِي لَهُ وَذَهَبَ، فَثَمَّرْتُ أَجْرَهُ حَتَّى كَثُرَتْ مِنْهُ الأَمْوَالُ، فَجَاءَنِي بَعْدَ حِينٍ فَقَالَ: يَا عَبْدَ اللَّهِ أَدِّ إِلَيَّ أَجْرِي، فَقُلْتُ لَهُ: كُلُّ مَا تَرَى مِنْ أَجْرِكَ مِنَ الإِبِلِ وَالبَقَرِ وَالغَنَمِ وَالرَّقِيقِ، فَقَالَ: يَا عَبْدَ اللَّهِ لاَ تَسْتَهْزِئُ بِي، فَقُلْتُ: إِنِّي لاَ أَسْتَهْزِئُ بِكَ، فَأَخَذَهُ كُلَّهُ، فَاسْتَاقَهُ، فَلَمْ يَتْرُكْ مِنْهُ شَيْئًا، اللَّهُمَّ فَإِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ، فَافْرُجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ، فَانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ، فَخَرَجُوا يَمْشُونَ “ তোমাদের পূর্বে তিন ব্যক্তি কোথাও যাচ্ছিল, একটি গুহার নিকটে রাত্রি হয়ে গেলে তারা তাতে প্রবেশ করল, অতঃপর পাহাড় থেকে একটি পাথর এসে গুহার উপর পড়লে তারা তাতে আটকা পড়ে গেল, অতঃপর তারা পরস্পর বলতে লাগল এ পাথর সরিয়ে আমরা কখনো মুক্তি পাবনা, কিন্তু যদি তোমাদের সৎ আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট দো‘আ কর। তাদের মধ্যে একজন বলল: হে আল্লাহ, আমার বৃদ্ধ পিতা-মাতা ছিল, আমি আমার পরিবারকে এবং দাস দাসীকে তাদের পূর্বে কখনো দুধ পান করাতামনা, একদা ঘাসের তালাশে বহু দূর চলে গেলাম, তাদের ঘুমের পূর্বে ফিরে আসতে পারিনি, অতঃপর আমি ছাগলের দুধ দহন করে এসে দেখি তারা ঘুমিয়ে পড়েছেন, এমতাবস্থায় আমি তাদেরকে জাগাতে পছন্দ করলামনা এবং তাদের পূর্বে আমার পরিবার এবং দাস দাসীকে দুধ পান করানো ভাল মনে করলাম না, অতঃপর আমি পেয়ালা হাতে নিয়ে তাদের ঘুম থেকে জাগার অপেক্ষা করছি, অপেক্ষা করতে করতে ফজর উদিত হয়ে গেল, আর আমার ছোট ছোট বাচ্চারা আমার পায়ের নিকট ক্ষুধার তাড়নায় চিৎকার করছে, তারপর তারা ঘুম থেকে জাগলে তাদের দুধটুকু পান করলেন। হে আল্লাহ! এ কাজ যদি আমি তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করে থাকি তবে আমাদের থেকে এ পাথরের বিপদকে দূর করে দাও। অতঃপর পাথরটি সামান্য সরে গেল কিন্তু তারা বের হতে পারল না। অন্যজন বলল: হে আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল, সে আমার নিকট সকলের চেয়ে প্রিয় ছিল, অতঃপর আমি তাকে একদিন কুপ্রস্তাব দিলে সে রাজি হয়নি, কোনো এক বৎসর সে অভাবে পড়ে আমার নিকট আসলে আমি তাকে একশত বিশটি দিনার দিলাম এই শর্তে যে, সে নিজেকে আমার নিকট সপে দিবে, তাতে সে রাজি হল, আমি তাকে আমার আয়ত্বে নিয়ে আসলাম, অন্য বর্ণনায়: যখন আমি তার দু’পায়ের মাঝে বসলাম তখন সে বলল : তুমি আল্লাহকে ভয় কর! সতীত্বের হক আদায় ব্যতীত তা তুমি নষ্ট করো না। অতঃপর তার নিকট থেকে ফিরে এলাম অথচ সে আমার নিকট সকলের চেয়ে প্রিয় এবং তাকে দেওয়া স্বর্ণ মুদ্রাও ছেড়ে দিলাম। হে আল্লাহ ! এ কাজ যদি আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি তবে আমাদেরকে এ বিপদ থেকে রক্ষা কর। অতঃপর পাথরটি সামান্য সরে গেল কিন্তু তারা বের হতে পারল না। তৃতীয় ব্যক্তি বলল: হে আল্লাহ! আমি কিছু কর্মচারী নিয়োগ করেছিলাম এবং সকলকেই পারিশ্রমিক দিয়েছি কিন্তু এক ব্যক্তি তার পারিশ্রমিক না নিয়ে চলে গেল, অতঃপর আমি তার পারিশ্রমিককে বাড়িয়েছি, বাড়তে বাড়তে বহু সম্পদ হয়ে গিয়েছে। বহু দিন পর সে এসে বলল: আব্দুল্লাহ, আমার পারিশ্রমিক দাও। আমি বললাম: এখানে তুমি যা দেখছ উট, গরু, ছাগল এবং কর্মচারী সবই তোমার, সে বলল: আব্দুল্লাহ ! তুমি আমার সহিত ঠাট্টা করো না ! বললাম : আরে আমি তোমার সহিত ঠাট্টা করছি না। অতঃপর সে সব কিছু নিয়ে গেল, কোনো কিছু ছেড়ে যায়নি। হে আল্লাহ, আমি যদি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করে থাকি তবে আমাদের বিপদকে দূর করে দাও। অতঃপর পাথরটি সরে গেল এবং তারা সেখান থেকে বের হয়ে চলে গেল। ( বুখারী, ২২৭২, মুসলিম, ২৭৪৩।) সৎ আমলের দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার ব্যাপারে এটি একটি জলন্ত প্রমাণ, কারণ এই তিনজন লোকই কঠিন অবস্থায় সৎ আমলকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট অসীলা করেছে। প্রথম ব্যক্তি পিতা-মাতার সহিত সদ্যবহার, তাদের সহিত নম্রভাব এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ করাকে অসীলা করেছে, আর এটি আল্লাহর নির্দেশের মধ্যে একটি আমল যা করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছে। তিনি বলেন: (এবং তোমরা পিতা-মাতার প্রতি ইহসান কর।) দ্বিতীয় ব্যক্তি এক মহিলার প্রেমে আশক্ত হয়ে তার সহিত ব্যভিচার করার সুযোগ পেয়েও তা থেকে বিরত থাকাকে অসীলা করেছে। এটিও একটি ভাল আমল। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৎকর্ম পরায়ন বান্দাদের সম্পর্কে বলেন: (এবং তারা ব্যভিচার করেনা।) তৃতীয় ব্যক্তি আমানতকে সংরক্ষণ এবং তা আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার নিকট অসীলা করেছে। আর তা একজন চাকরের হক্বকে যথাযথ সংরক্ষণ করে তা তাকে পুরোপুরি ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট অসীলা করেছে। তিনি বলেন: (হে মুমিনগণ তোমরা তোমাদের অঙ্গিকারগুলো আদায় কর।) যখন তারা এগুলো করল, আল্লাহ তাদের বিপদকে দূর করে দিলেন এবং তাদের উপর পতিত কঠিন অবস্থাকে দূরিভূত করে দিলেন। এখানে সৎ আমলের অসীলা করে আল্লাহর নিকট দো‘আ করার উপকারিতার উপর একটি নির্দেশনা রয়েছে এতে, সেটি হলো : এর মাধ্যমে দো‘আ কুবল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। এমনি ভাবে আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম এবং সমুন্নত গুণাবলীর দ্বারা তাঁর নিকট দো‘আ। কেননা, দো‘আ কুবল হওয়ার কারণসমূহের মধ্যে তা একটি। এজন্যে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তিকে বলতে শুনেছেন যে, (হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি, হে এক ও অদ্বিতীয়, ভরসাস্থল আল্লাহ, যিনি জনক নন জাতক ও নন এবং যাঁর সমকক্ষ কেউ নেই, তুমি আমার পাপসমুহকে ক্ষমা করে দাও . . .।) তিঁনি বললেন: তাকে ক্ষমা করা হয়েছে। কথাটি তিনি তিনবার বললেন। তৃতীয়ত : কোনো জীবিত উপস্থিত লোকের দো‘আর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা, যিনি দ্বীনদার এবং পরহেজগারিতায় প্রসিদ্ধ। কুরআন হাদীসে এর বহু দলীল রয়েছে। তার মধ্যে: ইউসুফ আলাইহিস সালামের ভাইদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন: ﴿ قَالُواْ يَٰٓأَبَانَا ٱسۡتَغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوبَنَآ إِنَّا كُنَّا خَٰطِ‍ِٔينَ ٩٧ قَالَ سَوۡفَ أَسۡتَغۡفِرُ لَكُمۡ رَبِّيٓۖ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٩٨ ﴾ [يوسف: ٩٧، ٩٨] (তারা বলল: হে আমাদের বাবা! আমাদের পাপের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন, নিশ্চয়ই আমরা অপরাধী, বাবা বলল: আমি আমার প্রতিপালকের নিকট তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো, নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল দয়ালু।) [সূরা ইউসুফ: ৯৭-৯৮] তারা তাদের পিতা ইয়াকুব আলাইহিস সালামের নিকট তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে বলল, তিনি জীবিত এবং উপস্থিত ছিলেন। এমনিভাবে মুমিনদের জন্য বৈধ করা হয়েছে যে, তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় তাঁর নিকট এসে তাঁর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে। তিনি বলেন: ﴿وَلَوۡ أَنَّهُمۡ إِذ ظَّلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ جَآءُوكَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ ٱللَّهَ وَٱسۡتَغۡفَرَ لَهُمُ ٱلرَّسُولُ لَوَجَدُواْ ٱللَّهَ تَوَّابٗا رَّحِيمٗا ٦٤ ﴾ [النساء: ٦٤] “এবং তারা যদি স্বীয় জীবনের উপর অত্যাচার করার পর আপনার নিকট এসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতো এবং রাসূলও তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতো, তবে নিশ্চয়ই তারা আল্লাহকে তাওবা গ্রহণকারী করুনাময়ী হিসাবে পেত।” [সূরা নিসা/ ৬৪] এটি তাঁর জীবদ্দশায়, কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে তাঁর নিকট বলা জায়েয নেই। বরং আমরা কোনো সৎ জীবিত উপস্থিত লোকের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট চাইতে পারি। যেমনিভাবে সাহাবায়ে কেরামগণ করতেন, আল্লাহ তাদের সকলের উপর সন্তুষ্ট হোন। এ কারণে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর পর তাঁর চাচা আব্বাসকে আল্লাহর নিকট তাদের জন্য দো‘আ করতে বললেন। এ প্রকার অসীলা বৈধ হওয়ার অন্যতম একটি দলীল হলো, সেই বেদুঈনের হাদীস, যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! ধন সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, পরিবার পরিজন অনাহারে থাকছে, অতএব আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করুন, তিনি যেন আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষন করেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দু’হাত তুলে দো‘আ করলেন। [ বুখারী, হাদীস নং ৯৩৩; মুসলিম, হাদীস নং ৮৯৭।] অনুরূপভাবে আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বর্ণিত হাদীসটি লক্ষ্য করুন, তাতে এসেছে- যখন অনাবৃষ্টি হতো তখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আববাস ইবন আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মাধ্যমে বৃষ্টি চাইতেন। তিনি বলতেন: হে আল্লাহ! আমরা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসীলায় তোমার নিকট বৃষ্টি চাইতাম তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দিতে, আর এখন আমরা আমাদের নবীর চাচার অসীলায় তোমার নিকট বৃষ্টি চাচ্ছি, তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দাও। তিনি বলেন: অতঃপর তাদেরকে বৃষ্টি দেওয়া হতো। [বুখারী, হাদীস নং ১০১০।] “আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহর নিকট দো‘আ করতেন ফলে তাদেরকে বৃষ্টি দেওয়া হতো। এ হাদীসে প্রমাণিত হয় যে, কোনো সৎ জীবিত উপস্থিত ব্যক্তির নিকট তোমার জন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ চাওয়া বৈধ। দো‘আর ক্ষেত্রে বৈধ অসীলার প্রকারের বর্ণনা এখানেই শেষ করলাম। এ সবগুলোই আল্লাহর বাণী: ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَٱبۡتَغُوٓاْ إِلَيۡهِ ٱلۡوَسِيلَةَ وَجَٰهِدُواْ فِي سَبِيلِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣٥ ﴾ [المائ‍دة: ٣٥] “হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর নিকট অসীলা তালাশ কর।” [সূরা আলমায়েদা: ৩৫] এর অন্তর্ভুক্ত।

শরিয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ অসীলা
অসীলার প্রকারগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় প্রকার শুরু করতে যাচ্ছি, আর সেটি হচ্ছে, শরিয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ অসীলা: তা হলো প্রতিটি সেই অসীলা কুরআন বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস থেকে যার কোনো দলীল নেই। এর উদাহরণের ক্ষেত্রে আমি দো‘আর সহিত সম্পৃক্ত উদাহরণগুলোই সীমাবদ্ধ রাখব, কেননা অবৈধ অসীলাগুলো যেমন: আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে সৎলোক এবং নবী রাসূলগণের দোহাই দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। যেমন এ কথা বলা যে, হে আল্লাহ, আমি তোমার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসীলায় বা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর অসীলায় বা অমুক শাইখের অসীলায় বলছি, তুমি আমার পাপগুলো ক্ষমা করে আমাকে অনুগ্রহ কর। এমনিভাবে কোনো পবিত্র ভূমি এবং কোনো ভালো সময়কে অসীলা করা। যেমন: এ কথা বলা যে, হে আল্লাহ আমি কা‘বার অসীলায় এবং রমাযান ও কদরের রাত্রির অসীলায় প্রার্থনা করছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও ইত্যাদি। উল্লেখিত সবগুলো পদ্ধতিই শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম। এবং তা সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিদয়াত। কারণ এর কোনোটাই জায়েয হওয়ার উপর কুরআন হাদীসের দলীল প্রমাণ নেই। কুরআন হাদীস এবং এ উম্মতের সালাফদের থেকে যত অসীলা এসেছে এর কোনটাতেই এমন কোনো অসীলা নেই, যাতে কোনো সৃষ্টির দোহাই দিয়ে আল্লাহর নিকট চাওয়া হয়েছে। এটি উম্মতের অধিকাংশ উলামার মত। শাইখুল ইসলাম তার কিতাব (আল ইস্তিগাছা) এর মধ্যে বলেছেন : এখনো আমি আমার সাধ্যমত সালাফগণ, ইমামগণ এবং উলামাদের মতামত খুঁজছি যে, দো‘আর ক্ষেত্রে তাদের কেউ কি সৎলোকদের অসীলা জায়েয স্বীকৃতি দিয়েছেন? বা তাদের কেউ কি এরূপ করেছেন? এর কোনো কিছুই পাইনি । এরপর আবু মুহাম্মদ ইবন আব্দুস সালাম-এর ফাতওয়াগুলো দেখেছি, তিনি ফাতওয়া দিয়েছেন যে, (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত কারো অসীলা জায়েয নেই, আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসীলা জায়েয হওয়ার জন্যও শর্ত হচ্ছে যে, এ ব্যাপারে বর্ণিত সহীহ হাদীস থাকতে হবে।) বস্তুত আবু মুহাম্মদ যা বলেছেন সেটি সহীহ নয়, কেননা তার পূর্বে সালাফদের কেউ এ কথা বলেননি। তাছাড়া এ মাসআলায় তার উল্লেখ করা দলীলও স্পষ্ট নয়, সামনে তা আসবে, বরং তিনি যা বলেছেন একথার কোনো প্রমাণ নেই। আলেমগণ কোনো ব্যক্তির সত্তাকে অসীলা করার কঠোর নিন্দা করেছেন। ইমাম আবু হানিফা (রাহমতুল্লাহ আলাই্হি) বলেন: “কারও জন্য এটা জায়েয নেই যে, সে আল্লাহকে তাঁর নিজ সত্তা ব্যতীত অন্য কারও অসীলা দিয়ে ডাকবে।”[ ইমাম আবু হানিফা রহ. এর শব্দ হচ্ছে, ‘লা ইয়াম্বাগী’। এ শব্দটি পূর্ববর্তী ইমাম ও মনিষীদের নিকট না জায়েয ও কাজটি করা মুমিনের পক্ষে অসম্ভব এ ধরনের অর্থ বোঝাতো। [সম্পাদক]] এ ব্যাপারে অনুমোদিত দো‘আ হলো সেই নির্দেশিত দো‘আ, যা আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী থেকে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ﴿ وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ ﴾ [الاعراف: ١٨٠] “আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে তোমরা তা দ্বারা তাঁকে ডাক।” [সূরা আল-আ‘রাফ: ১৮০] আবু ইউসুফ (রহমতুল্লাহ আলাইহি) বলেন: আমি হারাম মনে করি যে কেউ বলুক: বে হক্কে ফুলান (অমুকের অধিকারের অসীলায়), বা ‘বে হক্কে আম্বিয়ায়েকা ও রুসুলিকা’ (তোমার নবী ও রাসূলগণের অধিকারের অসীলায়) এবং বে ‘হক্কিল বাইতুল হারাম ওয়াল মাশআরিল হারাম (বাইতুল হারাম ও মাশ‘আরিল হারামের হক্কের অসীলায়)। …(ইমাম আবু ইউসুফ, ‘আকরাহু’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। পূর্ববর্তী ইমামগণ ‘আকরাহু’ শব্দ দ্বারা হারাম বোঝাতেন। এর জন্য দেখুন, ইবনুল কাইয়্যেম এর কিতাব ই‘লামুল মুওয়াক্কে‘য়ীন। [সম্পাদক]) কুদুরী বলেন: কোনো সৃষ্টির মাধ্যম দিয়ে কোনো কিছু চাওয়া জায়েয নেই, কারণ শ্রষ্টার উপর সৃষ্টির কোনো হক্ব নেই বিধায় তা সবার ঐকমত্যে জায়েয হবে না। এগুলো হানাফী আলেমগণের মত, শুধু আমরাই সৃষ্টির সত্তাকে অসীলা করা বা তার বরাত দিয়ে চাওয়া হারাম বলি না, রবং আমাদের পূর্বেকার আলেমগণের মতও তাই। যদি এ পুস্তিকাটির কলেবর বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা না থাকত, তবে তবে যেমনিভাবে ইমাম আবু হানিফা এবং তার সহচরদের মতামত ও দলীলগুলো পেশ করেছি, তেমনি ভাবে আমি অন্যান্য পূর্বসূরী ইমামগণের মতামত ও দলীলগুলোও পেশ করতাম।

সৃষ্টির সত্তাকে আল্লাহর নিকট অসীলা করা এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো সৃষ্টিকে ডাকার মধ্যে পার্থক্য গুরুত্বপূর্ণ দু’টি মাসআলার আলোচনা অবশিষ্ট রয়েছে:
প্রথম মাসআলাটি হচ্ছে: কোনো সৃষ্টির সত্তাকে আল্লাহর নিকট অসীলা করা এবং আল্লাহ ব্যতীত কোনো সৃষ্টির নিকট প্রার্থনা করা ও কিছু চাওয়ার মধ্যে পার্থক্য করা ওয়াজিব। কোনো সৃষ্টির সত্তার অসীলা এবং তার দোহাই দিয়ে চাওয়ার উদাহরণ যেমন কেউ বলল: হে আল্লাহ! তোমার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসীলায় বা তোমার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সত্তার অসীলায় আমাকে ক্ষমা কর, আমাকে অনুগ্রহ কর এবং জান্নাতে প্রবেশ করাও। এ প্রকার দো‘আ শির্ক নয় বরং বিদ‘আত। এ প্রকার দো‘আ যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্য কারো নিকট করে তবে তা ছোট শির্ক হবে, কিন্তু এতে সে দ্বীন থেকে সে বের হয়ে যাবে না। যেমন কেউ বলল: হে আল্লাহ আব্বাস বা আব্দুল কাদীরের সত্তার অসীলায় . . . ইত্যাদি। অপরদিকে আল্লাহ তা‘আলার ন্যায় কোনো সৃষ্টিকে ডাকা, যেমন কেউ বলল: হে আল্লাহর রাসূল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বিপদ দূর করে দিন, বা আমার ঋণ পরিশোধ করে দিন, অথবা আমার রোগ ভাল করে দিন। এটি অসীলা নয় বরং এটি বড় শির্ক, তাতে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে, কারণ দো‘আ একটি ইবাদত, আর কোনো ইবাদত আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য করা সকল আলেমের ঐকমত্যে বড় শির্ক। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে বলেন:
﴿ وَلَا تَدۡعُ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَۖ فَإِن فَعَلۡتَ فَإِنَّكَ إِذٗا مِّنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ١٠٦ ﴾ [يونس: ١٠٦] “আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকবেন না, যারা আপনার কোনো ক্ষতিও করতে পারবেনা এবং কোনো উপকারও করতে পারবেনা, তারপরও যদি আপনি এরকম করেন তবে আপনি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।” [সূরা ইউনুস: ১০৬] তিনি আরো বলেন:
﴿ ذَٰلِكَ بِأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ هُوَ ٱلۡبَٰطِلُ وَأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡكَبِيرُ ٦٢ ﴾ [الحج: ٦٢] 
“আর আল্লাহই সত্য এবং আল্লাহ ব্যতীত যাদের তারা ডাকে তারা বাতিল এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ মহামহিম।” [সূরা হজ্জ/৬২] তিনি আরো বলেন: ﴿ وَمَن يَدۡعُ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ لَا بُرۡهَٰنَ لَهُۥ بِهِۦ فَإِنَّمَا حِسَابُهُۥ عِندَ رَبِّهِۦٓۚ إِنَّهُۥ لَا يُفۡلِحُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ١١٧ ﴾ [المؤمنون: ١١٧] “যে ব্যক্তি আল্লাহর সহিত অন্য কাউকে ইলাহ হিসাবে ডাকবে যার প্রমাণ তার নিকট নেই, তার হিসাব তার পালন কর্তার নিকট রয়েছে, নিশ্চয়ই কাফেরগণ মুক্তি পাবেনা।” [সূরা মুমিনূন/ ১১৭] তিনি আরো বলেন: ﴿ وَلَئِن سَأَلۡتَهُم مَّنۡ خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ لَيَقُولُنَّ ٱللَّهُۚ قُلۡ أَفَرَءَيۡتُم مَّا تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ إِنۡ أَرَادَنِيَ ٱللَّهُ بِضُرٍّ هَلۡ هُنَّ كَٰشِفَٰتُ ضُرِّهِۦٓ أَوۡ أَرَادَنِي بِرَحۡمَةٍ هَلۡ هُنَّ مُمۡسِكَٰتُ رَحۡمَتِهِۦۚ قُلۡ حَسۡبِيَ ٱللَّهُۖ عَلَيۡهِ يَتَوَكَّلُ ٱلۡمُتَوَكِّلُونَ ٣٨ ﴾ [الزمر: ٣٨]  “আর যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আকাশ এবং জমীনকে কে সৃষ্টি করেছে? অবশ্যই তারা বলবে : আল্লাহ! বলুন, আমাকে জানাও যে, আমার আল্লাহ যদি আমার কোনো ক্ষতি করতে চান, তবে তোমরা আল্লাহকে ছাড়া আর যাদেরকে ডাক, সে সব কি আমার থেকে সে ক্ষতি দূর করতে পারে? অথবা আল্লাহ যদি আমার প্রতি কোনো দয়া করতে চান, তবে কি সে সব আমার থেকে সে দয়া রুখতে পারে? বলুন, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তাঁর উপরই যেন ভরসাকারীগণ ভরসা করে” [সূরা যুমার/৩৮] তিনি আরো বলেন: ﴿ وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [الجن: ١٨]  “সকল মাসজিদ আল্লাহর জন্য, কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে ডেকোনা।” [সূরা আল-জিন্ন, ১৮] এ বিধান হলো সেই ব্যক্তির ব্যাপারে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত কারো নিকট এমন কিছু চাইবে যা তার ক্ষমতার বাইরে। অতএব, তা যেন অসীলার মাসআলার সাথে মিশে না যায়, কেননা অসীলা এক বিষয় আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কাছে কিছু চাওয়া অন্য বিষয়। দ্বিতীয়টি মাসআলাটি হচ্ছে: সৃষ্টির সত্তার অসীলা ধরা জায়েয হওয়ার কোনো দলীল বা প্রমাণ নেই। যারা সৃষ্টির সত্তার অসীলা জায়েয বলেছে, তাদের নিকট নির্ভেজাল কোনো দলীল বা প্রমাণ নেই। হয়তো তারা এমনসব প্রমাণ পেশ করবে যা সহীহ কিন্তু মূলত তা অষ্পষ্ট, বরং তা তাদের দাবীর সপক্ষে কোনো প্রমানই বহন করেনা। নতুবা তাদের পেশ করা দলীল হবে অশুদ্ধ; সনদের দিক থেকে সহীহ নয়। [সহীহ হাদীস দিয়ে ভুল পদ্ধতিতে দলীল গ্রহণ করার প্রমাণ]

(একটি সন্দেহ ও তার অপনোদন)
যেমন: সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদীস দ্বারা কোনো সত্তার অসীলা জায়েযের দলীল গ্রহণ করা। সেখানে এসেছে, “উমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর যামানায় যখন অনাবৃষ্টি হত, তখন তিনি আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর অসীলায় বৃষ্টি চাইতেন, তিনি বলতেন: হে আল্লাহ আমরা তোমার নবীর অসীলায় বৃষ্টি চাইতাম তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দিতে, আর এখন আমরা নবীর চাচার অসীলায় বৃষ্টি চাচ্ছি, তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দাও। তিনি বলেন : তখন আমাদেরকে বৃষ্টি দেওয়া হতো।” কিছু লোক ধারণা করে যে, এ অসীলা ছিল আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সত্তার অসীলা, অথচ তা সঠিক নয়। বরং এ অসীলা ছিল আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর দো‘আর অসীলা। যেমনি ভাবে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে করেছিলেন। কেননা সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় তাঁর নিকট এসে তাঁকে অসীলা করে চাইতেন “তাঁকে বলতেন তাদের জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করার জন্য। যেমন এসেছে এক বেদুইনের হাদীসে, যে ব্যক্তি জুমআর দিন মাসজিদে এসেছে, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর খুৎবা দিচ্ছিলেন, অতঃপর সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বৃষ্টির জন্য দো‘আ চাইলে তিনি আল্লাহর নিকট বৃষ্টি চাইলেন। আবার পরবর্তী জুমআতে সেই বেদুইন এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট রাস্তা ঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার এবং ঘর বাড়ী ভেঙ্গে যাওয়ার অভিযোগ করে আল্লাহর নিকট তাঁকে বৃষ্টি থামানোর জন্য দো‘আ করতে বলল। বস্তুত এ হলো বৈধ অসীলা। একটু চিন্তা করে দেখুন, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসীলা পরিত্যাগ করে তাঁর চাচার দো‘আর অসীলার দিকে ফিরে গেলেন, কারণ তিনি জানেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর পর তাঁর অসীলা চাওয়া অসম্ভব। কেননা তাঁর মাধ্যমে আল্লাহর নিকট কিছু চাওয়া একটি ইবাদত, আর সেটি একটি আমল যা তাঁর মৃত্যুর পর বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এ কাজটি কোনো সত্তার অসীলা জায়েয হওয়ার উপর দলীল গ্রহণ করাকে যে জিনিস বাতিল করে, তা হলো: আল্লামা ইবনে হাজার (রহমতুল্লাহ আলাইহি) আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর দো‘আর গুণাগুণের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, যুবাইর ইবন বাক্কার তার কিতাব (আল আনসাব) এ বলেছেন : যখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর অসীলায় বৃষ্টি চাইলেন, তখন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছিলেন: (হে আল্লাহ, যে কোনো বিপদ শুধু অপরাধের কারণেই আসে এবং কেবল তাওবার মাধ্যমেই তা দূর হয়, কাজেই তোমার নবীর নিকট আমার ব্যক্তিত্ব থাকার কারণে লোকজন আমার মাধ্যমে তোমার সম্মুখীন হয়েছে, আমাদের অপরাধ নিয়ে তোমার নিকট এই হাত বাড়ালাম এবং তাওবার মাধ্যমে তোমার নিকট আমাদের মাথা ঝুকালাম, তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দাও।) এই সেই অসীলা যা উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং সাহাবাবৃন্দ আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট চেয়েছিলেন, তারা তাকে আল্লাহর নিকট তাদের জন্য দো‘আ করতে বলেছিলেন। তাহলে কিভাবে বলা যায় যে, তারা আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর সত্তার অসীলা এবং তার দোহাই দিয়ে চেয়েছিলেন? তা একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার। অনুরূপভাবে হাফেজ ইসমাঈলী তার কিতাব (মুস্তাখরাজ) এ সহীহ সনদে এ হাদীসটি নিয়ে এসেছেন এই শব্দে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে তারা যখন অনাবৃষ্টিতে ভোগতো তখন তিঁনি তাদের জন্য বৃষ্টি চাইতেন, অতঃপর তাদেরকে বৃষ্টি দেওয়া হতো, কিন্তু যখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খেলাফত আসলো . . .) এতে ষ্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসীলায় তাদের বৃষ্টি চাওয়া ছিল তাঁর জীবদ্দশায়।

[অপর একটি সন্দেহের অপনোদন]
উক্ত হাদীসের অনুরূপ আরেকটি হাদীস দ্বারা কেউ কেউ দলীল পেশ করে সন্দেহে নিপতিত করতে থাকে, (অথচ তাও দলীল হিসেবে পেশ করার জন্য ভুল পদ্ধতিতে পেশ করা হয়েছে) তা হচ্ছে, উসমান ইবন হানিফের হাদীস। হাদীসটি হচ্ছে, এক অন্ধ ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল: আপনি আল্লাহর নিকট আমার আরোগ্যের জন্য দো‘আ করুন, তিনি বললেন: তুমি যদি চাও তবে আমি তোমার জন্য দো‘আ করব, আর যদি ধৈর্য্য ধারণ কর তবে তোমার জন্য সেটিই ভাল। সে বলল: আপনি দো‘আ করুন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নির্দেশ দিলেন ভালোভাবে অজু করে দু’রাকাত নামায পড়ে এ দো‘আ করার জন্যে: (হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি এবং তোমার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, রহমতের নবীর মাধ্যমে তোমার সম্মুখীন হয়েছি, হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি আমার এ প্রয়োজনের জন্য আপনার মাধ্যমে আমার প্রতিপালকের দিকে মুখ করেছি, যাতে আমাকে তা দেওয়া হয়। হে আল্লাহ! আমার ব্যাপারে তুমি তাঁর সুপারিশ কবুল কর।) বর্ণনাকারী বললেন: লোকটি এরকম করলে তার রোগ ভাল হয়ে গেল। হাদীসটি ইমাম আহমদ ও অন্যান্যরা সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। এই হাদীসটিও কোনো সত্তার অসীলার উপর দলীল বহন করে না, বরং তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় তাঁর দো‘আর মাধ্যমে আল্লাহর নিকট চাওয়া হয়েছে। আর এটিই বৈধ অসীলা। আর এটি প্রমাণ করে যে, অন্ধ ব্যক্তিটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল: আপনি আমার রোগমুক্তির জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করুন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দো‘আ করার অঙ্গিকার দিয়ে বলেছেন : তুমি যদি চাও তবে তোমার জন্য দো‘আ করব আর যদি . . .) তারপর অন্ধলোকটি দো‘আর জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জোর দিয়ে বলল যে, (আপনি দো‘আ করুন।) তারপরও লোকটির দো‘আ ছিল এই : (হে আল্লাহ ! আমার ব্যাপারে তুমি তাঁর সুপারিশ গ্রহণ কর।) লোকটির এ কথার মাধ্যমেই রাসূলের সত্তার অসীলা গ্রহণের সম্ভাবনা রহিত হয়ে গেল, কারণ এ সুপারিশ হলো দো‘আ। অর্থাৎ “হে আল্লাহ আমার ব্যাপারে আপনি আপনার নবীর সুপারিশ কবুল করুন”। অর্থাৎ আমার ব্যাপারে তাঁর দো‘আ। হাদীসের কিছু কিছু বর্ণনায় এসেছে: (হে আল্লাহ আমার ব্যাপারে তাঁর সুপারিশ গ্রহণ কর এবং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ কর।) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাপারে অন্ধ ব্যক্তির সুপারিশ কিভাবে হয়?! বস্তুত তার অর্থ হচ্ছে, “তোমার নিকট আমার চাওয়া হলো যে, তুমি আমার ব্যাপারে তোমার নবীর সুপারিশ গ্রহণ কর। উল্লেখিত সবগুলো কথাই প্রমাণ করে যে, অন্ধ ব্যক্তির কথা ছিল (হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি এবং তোমার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রহমতের নবীর মাধ্যমে তোমার সম্মুখীন হয়েছি) এতে শব্দ গোপন রয়েছে, সেটি হলো: আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি এবং তোমার নবীর দো‘আর মাধ্যমে আমি তোমার সম্মুখীন হয়েছি।)

নবী এবং সৎলোকদের সত্তার অসীলা নিষেধের অর্থ এই নয় যে, তাদের কোনো সত্তা এবং মর্যাদা নেই
প্রিয় ভাইসকল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তাঁর অসীলা গ্রহণ করা এবং নবীগণ ও সৎলোকদের অসীলা গ্রহণ করা আমাদের অপছন্দ হওয়ার অর্থ এটা নয় যে, আমরা তাদের সম্মান ও মর্যাদাকে অস্বীকার করি, বা আমরা তাদের সম্পর্কে বিদ্বেষ মনোভাব রাখি; যেমন অপবাদকারীগণ বলে থাকেন। তা একেবারেই অসম্ভব। আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট অধিক প্রিয় আমাদের নিজের নাফস, পরিবার এবং ধন সম্পদের চেয়ে। এবং তাঁর সম্মান বহু উর্দ্ধে, ফলে তাঁর প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁকে মহব্বত করা ব্যতীত কারো ঈমান পূর্ণ হবে না। রাসূলের জন্য আমাদের মহব্বত বা ভালবাসার দাবী হলো: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যেভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে বলেছেন, হুবহু সেভাবেই ইবাদত করব, তিনি আমাদেরকে দ্বীনের মধ্যে বিদ‘আত সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছেন এবং তিনি ও তাঁর সাহাবাগণ রাদিয়াল্লাহু আনহুম যার উপর আছেন তা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এর অতিরিক্ত কোনো কিছু করা ঘাটতি এবং ক্ষতি এবং তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে এবং পবিত্র শরিয়ত যা আল্লাহ তা‘আলা রাসূলের সম্মানিত হস্তদ্বয়ের মাধ্যমে পরিপূর্ণ করেছেন তা বর্ণনার ব্যাপারে অপবাদ দেওয়ার শামিল। সুতরাং এ সমস্ত বাক্য, যা বলা হয় যে: ‘যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসীলা গ্রহণ করাকে জায়েয স্বীকৃতি দেয়না তারা তাঁর বিদ্বেষী’, এটি একটি অপবাদ এবং প্রতারণা। এর দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য হলো: কেবলমাত্র এক আল্লাহর ইবাদত করা থেকে মানুষদের বাধা দেওয়া এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ থেকে দূরে রেখে কুপ্রবৃত্তি, মনগড়া মতবাদ এবং তারা যা ভাল মনে করে তার অনুসরনের দিকে মানুষকে নিয়ে যাওয়া। দেখুন একটি স্পষ্ট বাস্তব চিত্র, যা আপনাকে প্রমাণ করে দিবে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মর্যাদা এবং সম্মান হয় সেই জিনিস দ্বারা যা শরিয়ত নিয়ে এসেছে, পক্ষান্তরে কোনো কৃপ্রবৃত্তি দ্বারা নয়। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: “তাদের নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে অধিক প্রিয় কেউ ছিলনা, তারা যখন তাঁকে দেখতেন তখন কেউ দাড়াতেন না, কারণ তারা জানতেন যে, তিনি তা পছন্দ করেন না। এটি তিরমিযী বর্ণনা করেছেন।(তিরমিযী, ২৭৫৪।) এ ক্ষেত্রে দাড়ানো আগত ব্যক্তির সম্মান এবং তাকে ভালবাসারই বহিঃপ্রকাশ, এতদসত্বেও সাহাবীগণ তা করতেন না, কেননা তারা জানতেন যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পছন্দ করেন না। এতে কি বলা যায় যে, সাহাবায়ে কেরামগণ রাসূলুল্লাহকে ভালোবাসতেন না? কখনো না, তারা এ ধরণের অপবাদ থেকে বহু দূরে। তারপর আরও একটি কথা হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীনের ব্যাপারে অধিক বাড়াবাড়ি এবং উচ্চ প্রশংসা বা তোষামোদ করা থেকে সতর্ক করে দিয়েছেন যা আল্লাহর সহিত শির্ক করার দিকে নিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেছেন: (তোমরা আমার অধিক প্রশংসা করোনা যেভাবে নাসারাগণ ইবনে মারিয়মের প্রশংসা করেছে, আমি বরং একজন বান্দা, কাজেই তোমরা বল: আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল।) [মুসলিম, ৩৪৪৫।] وصلى الله وسلم على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين

সংকলন: ডক্টর আব্দুস সালাম বারজাস আল আব্দুল করীম
অনুবাদক: মোহাম্মদ ইদরীস আলী মাদানী
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: আল মাকতাব আত তাআউনী লিদ দাওয়াহ ওয়া তাওইয়াতুল জালিয়াত, সালীল
সংগ্রহে: হাফেজ নুর আলম


আল্লাহ কি নিরাকার ?
লেখক: হাফেজ মো: নুরআলম

দুঃখজনক হলেও সত্য যে অধিকাংশ মানুষ আল্লাহ্‌ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখে না। আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীনের প্রতি ভ্রান্ত আক্বীদাহ বাদ না দিলে কঠিন শাস্তি পেতে হবে । আল্লাহ্‌ বলেনঃ “এবং মুনাফিক পুরুষ মুনাফিক নারী ও মুশরিক পুরুষ মুশরিক নারী যারা আল্লাহ্‌ সম্বধে মন্দ ধারণা রাখে তাদেরকে আল্লাহ্‌ শাস্তি দিবেন।” [সুরা-ফাতহ, আয়াত-৬]

খুবই আশ্চর্য বিষয় অধিকাংশ মুসলিম এর আক্বীদাহ সঠিক না । তারা সঠিকভাবে আল্লাহ্‌কে চেনেন না । আল্লাহ সুবাহানাহুয়াতাআলা কোরআনে তাঁর সিফাতে জাত এবং গুনাবলী বর্ণনা করেছেন তাঁর নিজস্ব সত্তার বর্ণনায় হাত, পা, মুখ, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণ শক্তি, তাঁর সন্তুষ্টি ও ক্রোধ-ইত্যাদি উল্লেখ করছেন । রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র স্বত্তা গুনাবলীর বর্ণনা করেছেন । মুসলিমগণ যে আল্লাহ্‌র ইবাদত করে তাঁর কোন মূর্তি নেই । তাই যেসব মুসলিম সঠিক আক্বীদার খবর রাখে না তারা হিন্দুদের সাকার বা মূর্তিমান দেবতার বিপরীতে নিরাকার আল্লাহ্‌র ধারনা গ্রহন করেছে।

• অথচ কোরআন ও সহীহ হাদীস থেকে আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালার আকার রয়েছে তা প্রমানিত।

কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াত ও রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিশুদ্ধ হাদিসে আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালার চেহারা, হাত, পা, চক্ষু, জাত বা সত্তা, সুরাত বা আকারের উল্লেখ হয়েছে যার অর্থ স্পষ্ট। এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌র নির্দিষ্ট আকার আকৃতি আছে বলে পাওয়া যায়। যারা বলে আল্লাহ্‌ নিরাকার তারা মূলত কোরআনের এসব আয়াতকে অস্বীকার করার মত স্পর্ধা প্রদর্শন করে থাকে। কারণ যিনি নিরাকার তাঁর এসব কিছু থাকার কথা নয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

“তারা আল্লাহ্‌র যথার্থ মর্যাদা নিরুপন করতে পারেনি। কিয়ামতের দিন সমগ্র পৃথিবী তাঁর হাতের মুঠোতে থাকবে।” [সূরা-যুমার, আয়াত-৬৭]

আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামিন বলেনঃ (কিয়ামতের দিন) ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে । (হে রাসুল) আপনার মহিমাময় ও মহানুভব রবের চেহারা অর্থাৎ সত্ত্বাই একমাত্র বাকি থাকবে। [আর-রাহমান-২৬-২৭]

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “হে ইবলিস, তোমাকে কোন জিনিসটি তাকে সেজদা করা থেকে বিরত রাখল যাকে আমি স্বয়ং নিজের হাত দিয়ে বানিয়েছি, তুমি কি এমনি ওদ্ধত্ত প্রকাশ করলে, না তুমি উচ্চমর্যাদা সম্পূর্ণ কেউ” [সূরা-সদ,আয়াত-৭৫]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা বলেনঃ “বরং তাঁর দু হাতই প্রসারিত, যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন।” [সূরা-সদ-৬৪]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা আরও বলেনঃ “বল -অনুগ্রহ আল্লাহ্‌রই হাতে” [সূরা-আলে ইমরান-৭৩]

অথচ আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতাআলা কোরআনে বলেন- “সেদিন কোন কোন মুখ খুব উজ্জল হবে । তারাই হবে তাদের প্রতিপালকের দর্শনকারী” [সুরা-আল-কিয়ামাহ, আয়াত-২৩]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতাআলা বলেনঃ “দৃষ্টি শক্তি তাকে প্রত্যক্ষ করতে পারে না বরং তিনিই দৃষ্টি শক্তিকে প্রত্যক্ষ করেন এবং তিনিই দৃষ্টি শক্তিকে প্রত্যক্ষ করেন এবং তিনি সুক্ষদর্শি, সম্যকপরিজ্ঞাত ।” [সূরা-আনআম,আয়াত-১০৩]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতাআলা বলেনঃ “আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তাঁর মুখমণ্ডল ব্যতীত সব কিছুই ধ্বংসশীল।” [সূরা-আল কাসাস, আয়াত-৮৮]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতাআলা নবী মূসা (আঃ) কে লক্ষ্য করে বলছেনঃ “আমি আমার নিকট থেকে তোমার উপর ভালবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম যাতে তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হও।” [সূরা-ত্বহা, আয়াত-৩৯]

এমনিভাবে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে স্বান্তনা দিতে গিয়ে বলেনঃ “আপনি আপনার রবের নির্দেশের অপেক্ষায় ধৈর্যধারন করুন আপনি আমার চোখের সামনেই রয়েছেন।” [সূরা-আত-তূর, আয়াত-৪৮]

আল্লাহ্‌ বলেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ শ্রবণ করেন ও দেখেন ।” [সূরা-মুজাদালাহ, আয়াত-১]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা বলেনঃ আল্লাহ্‌র সাদৃশ্য কোন বস্তুই নেই এবং তিনি শুনেন ও দেখেন ।” [সূরা-আশ-শুরা, আয়াত-১১] “কিয়ামতের দিনে আল্লাহর হাঁটুর নিম্নাংশ উন্মোচিত করা হবে এবং সাজদা করার জন্য সকলকে আহবান করা হবে, কিন্তু তারা তা করতে সমর্থ হবে না।” [সুরা-কালাম,আয়াত-৪২]

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌র রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহপাক সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে ভাঁজ করবেন অতঃপর সেগুলোকে ডান হাতে নিয়ে বলবেন, আমি হচ্ছি শাহানশাহ (মহারাজা) অত্যাচারী আর যালিমরা কোথায়? অহংকারীরা কোথায়? [মুসলিম]

রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “পাহাড়-পর্বত এবং বৃক্ষরাজি এক আঙ্গুলে থাকবে, তারপর এগুলোকে ঝাঁকুনি দিয়ে তিনি বললেন, আমিই রাজাধিরাজ আমিই আল্লাহ্‌।” [মুসলিম]

অপর এক বর্ণনায় রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন- “আল্লাহ্‌ সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে এক আঙ্গুলে রাখবেন, পানি এবং ভু-তলে যা কিছু তা এক আঙ্গুলে রাখবেন।” [বুখারী ও মুসলিম]

আবু সাইয়ীদ আল-খুদরী (রাঃ) বলেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ আমাদের প্রতিপালক (আল্লাহ্‌) কিয়ামতের দিনে তাঁর হাঁটুর নিম্নাংশ প্রকাশ করে দেবেন, প্রত্যেক মুমিন, মুমিনা তাতে সাজদা করবেন এবং যে ব্যক্তি দুনিয়াতে লোক-দেখান ও সম্মানের জন্য তা করত সে সাজদা করতে গেলে তাঁর পিঠ সমান হয়ে ফিরে আসবে (বা সিজদা করতে সমর্থ হবেনা) । [বুখারী,মুসলিম,তিরমিযী,আহমদ]

এ সকল কোরআনের আয়াত ও হাদীস আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীন যে নিরাকার নন তার অকাট্য প্রমান করে বর্ণনা করে। আল্লাহর সিফাতকে তাঁর কোন মাখলুকের সাথে সাদৃশ্য না করে তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে । সর্বপরি নিরাকার কথাটি কোরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত নয়। বরং হিন্দু সংস্কৃতি থেকে আমদানীকৃত বটে। কোন কল্পনার আশ্রয় না নিয়ে কিংবা প্রকৃত স্বরূপ জানতে না চেয়ে এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে ।

এ প্রসঙ্গে ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ “পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্‌র যে সমস্ত সিফাত (গুন) বর্ণিত হয়েছে যেমন- আল্লাহ্‌র হাত, পা, চেহারা, ইত্যাদি আমরা তা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি। স্বীকার করি এগুলো হচ্ছে তাঁর সিফাত বা গুণাবলী। আমরা যেমন কখনও আল্লাহ্‌র সিফাত সম্পর্কে এ প্রশ্ন করি না বা করবো না যে, এ সিফাতগুলো (হাত, পা, চেহারা, চোখ ইত্যাদি) কেমন, কিরুপ বা কিভাবে, কেমন অবস্থায় আছে, তেমনি আল্লাহ্‌র সিফাতের কোন নিজস্ব ব্যাখ্যা বা বর্ণনা দিতে যাই না। কেননা তিনি তা বর্ণনা করেন নাই। যেমন- আমরা একথা কখনো বলিনা যে, আল্লাহ্‌র হাত হচ্ছে তাঁর কুদরতি হাত, শক্তিপ্রদ পা বা তাঁর নিয়ামত। এ ধরনের কোন ব্যাখ্যা দেয়ার অর্থ হল আল্লাহ্‌র প্রকৃত সিফাতকে অকার্যকর করা বা বাতিল করে দেয়া বা অর্থহীন করা । আল্লাহ্‌র হাতকে আমরা হাতই জানবো এর কোন বিশেষণ ব্যবহার করবো না। কুদরতি হাত রূপে বর্ণনা করবো না। কোন রকম প্রশ্ন করা ছাড়াই যেরূপ কোরআনে বর্ণিত হয়েছে হুবুহু সে রকমই দ্বিধাহীনে বিশ্বাস করি”। [আল ফিকহুল আকবার]

অতএব, সার কথা হল, আল্লাহ্‌র অবয়ব বিশিষ্ট অস্তিত্বকে, সত্ত্বাকে গুনাবলীকে অস্বীকার করে (অর্থাৎ নিরাকার করে) সন্যাসী, সুফী, পীর সাহেবেরা অলীক সাধনা বলে তাদের ক্বলবে বসিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করার জন্যই আল্লাহ্‌কে নিরাকার বানিয়ে ধর্মীয় সমাজে প্রচার করেছেন। এটি ‘তাওহীদ আল আসমা ওয়াস সিফাত’ এর সুস্পষ্ট খেলাফ। অবয়ব বিশিষ্ট তথা অস্তিত্বময় আল্লাহ্‌কে নিরাকার না করলে তো তাঁকে (আল্লাহ্‌কে) তাদের ক্বলবে বসানো যাবে না । নিরাকার আল্লাহ্‌কে অলীক সাধনায়, কল্পনায় ক্বলবে বসিয়ে এই মুসলিম রূপধারী পুরোহিতরা নিজেদেরকে দেবতার মর্যাদায় ভূষিত হয়ে সমাজে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে চলেছেন। আসলে এ সবই ভণ্ডামির বেসাতি, স্বার্থোদ্ধারের ধান্দা ।

আল্লাহ আমাদের তাওহীদ বুঝার ও মানার তাওফিক দান করুন, সকল প্রকার শিরক থেকে রক্ষা করুন, আমিন।

লেখক: হাফেজ মো: নুরআলম

Page – 1
Pages – 1 2

© 2020 - Dawah wa Tablig