Dawah wa Tablig Perfect Islamic Site based on Quran & Sahi Hadith

Usuluddin

পৃষ্ঠা সমূহ যাও –    
পৃষ্ঠা – ১

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمن الرَّحِيمِ
উসূলুদ্বীন বা দ্বীনের মূল বা উৎস
আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব

ইসলামী শরিয়তের বিধিবিধানের উসুল দু’টিঃ-
০১। আল-কুরআনুল কারীম।
০২। রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বিশুদ্ধ হাদীস।

দ্বীনের সকল আকীদা, বিধানসমূহ, লেনদেন, আচার-আনুষ্ঠান সবকিছুর মূল ভিত্তি হলো এই দু’টি অহী তথা কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস। আর ইহাই হচ্ছে ইলাহী (ঐশী) দ্বীনের দাবী। কারণ দ্বীনের ভিত্তি সম্পূর্ণ নির্ভুল এলাহী দলিল প্রমাণের উপর হওয়া জরুরি। দ্বীনের বিধান কোন গবেষকের গবেষণা বা কারো স্বপ্ন কিংবা সুফীদের ইলহাম অথবা কাশফ দ্বারা হতে পারে না। ইমাম শাফী (রহঃ) বলেনঃ “কোন অবস্থাতে কারো কথা মান্য করা জরুরি না। কিন্তু আল্লাহর কিতাব ও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিশুদ্ধ হদীস সর্বাবস্থাতে মান্য করা জরুরি। এ ছাড়া সবকিছুই এ দু’টির অধীন।” [জিমাউল ‘ইলম]

কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসের অধীন দু’টি দলিল (প্রমাণ) রয়েছে। তা হলোঃ-
০১) ইজমা‘আঃ-
ইজমা‘আ এমন একটি বিষয় যা কুরআন ও হাদীসের অধীন কোন নতুন বিষয়ে (সাহাবায়েকেরামের সময় থেকে) যুগের উম্মতের বিদ্বানগণের ঐক্যমত।
০২) বিশুদ্ধ কিয়াসঃ-

বিশুদ্ধ কিয়াস হচ্ছে কোন মাসালার হুকুম কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসে সরাসরি না থাকলে এবং ইজমাতেও না থাকলে সেই মাসালার (শাখা) সাথে সম্পর্কিত কারণ এমন মাসালার মধ্যে পাওয়াগেল যার হুকুম কুরআন মাজিদে বা বিশুদ্ধ হাদীসে আছে (আসল) সেই হুকুম (শাখা) এর উপর গ্রহণ করার নাম কিয়াস। যে সব মাসালার হুকুম কুরআন মাজিদ বা বিশুদ্ধ হাদীসে উপস্থিত সেখানে কিয়াস করা হারাম বা নিশিদ্ধ। ইমাম শাফী‘আ (রহঃ) বলেনঃ “কোন ব্যাপারে জ্ঞানের ভিত্তি ছাড়া কারো জন্য হলাল ও হারাম বলা বৈধ নয়। আর জ্ঞানের ভিত্তি হলো, আল্লাহর কিতাব ও রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বিশুদ্ধ হাদিস এবং এ দুটির অধীন ইজমা ও কিয়াস।” [রিসালাহ] ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেনঃ “আমরা যখন বলিঃ কিতাব, সুন্নাহ ও ইজমা‘আ তখন তিনটির বক্তব্য একই। কারণ, যা কিছু কুরআনে রয়েছে রসূলুল্লাহ (সাঃ) তারই সমর্থন করেন এবং উম্মতের বিদ্বানগণের ঐক্যমতও তার উপর। কেন না, প্রতিটি মুমিনের প্রতি ওয়াজিব হলোঃ কুরআনের আনুগত্য করা এবং রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সমস্ত বিশুদ্ধ হাদীসের অনুসরণ করা। কারণ, কুরআন পাকে আল্লাহ তাআ’লা নবী (সাঃ) এর আনুগত্য করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, যার প্রতি সমস্ত মুমিনরা ঐক্যমত। অনুরূপ সমস্ত মুসলিমরা এর প্রতি ইজমা‘আ (ঐক্যমত) করেছে। কারণ, মুসলিম উম্মাতের ইজমা‘আ (ঐক্যমত) কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসের সম্পূর্ণভাবে অনুকুলে।” [মাজমু’উল ফাতাওয়া:৭/৪০]

প্রথম মূল ভিত্তি – কুরআনের পারিচয়ঃ
কুরআন হলো আল্লাহ তা‘আলার মহাবাণী যা মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর দীর্ঘ ২৩ বছর যাবত ফিরিস্তা জিবরীল আমীনের মাধ্যমে সুস্পষ্ট আরবি ভাষায় নাজিল হয়েছে। ইহা মুতাওয়াতির (এত অধিক সংখ্যাক বর্ণনাকারী দ্বারা বর্ণিত সূত্র যা মিথ্যা হওয়া অসম্ভব) সূত্রে বর্ণিত যার শব্দ ও অর্থ উভয়টি মু‘জিযা ও এর মধ্যে ৮৬টি মক্কী এবং ২৮টি মাদানী মোট ১১৪টি সূরা রয়েছে এবং পারা সংখ্যা ত্রিশ। কুফার কারীদের গণনা মতে আয়াত সংখ্যা ৬,২৩৬টি ও অন্যান্যদের গণনায় ৬,৬৬৬টি। আর শব্দ সংখ্যা ৭৭,৪৩৭টি বা ৭৭,৪৩৯টি ও আক্ষর সংখ্যা ৩,২০,৬৭০টি।
নির্দেশের আয়াতঃ ১০০০টি।
নিষেধের আয়াতঃ ১০০০টি।
প্রতিশ্রুতির আয়াতঃ ১০০০টি।
শাস্তির আয়াতঃ ১০০০ট।
কেসাস ও খবরাদির আয়াতঃ ১০০০টি।
হালাল ও হারামের আয়াতঃ ৫০০টি।
দোয়ার আয়াতঃ ১০০টি।
নাসিখ (বিধান রহীতকারী) ও মানসূখ (রহীত বিধান)- এর আয়াতঃ ৬৬টি।

কুরআনের কিছু বৈশিষ্ট্যঃ
(ক-) রাব্বানীঃ
কুরআন আল্লাহর নিকট থেকে আসা পবিত্র কিতাব। আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ “নিশ্চয় এটা সম্মানিত কুরআন, যা আছে এক গোপন কিতাবে, যারা পাক-পবিত্র তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। এটা বিশ্ব পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।” (সূরা ওয়াকিয়াহ, ৭৭-৮০)
(খ-) ক্রটিমুক্তঃ
কুরআনের মাঝে নেই কোন প্রাকার ক্রটি ও অপূর্ণতা। কারণ, ইহা সর্বপ্রাকার ক্রটি ও অপূর্ণতা হতে মুক্ত ও মহাপবিত্র আল্লাহতা‘আলার পক্ষ থেকে নাজিলকৃত। আল্লাহতা‘আলার বাণীঃ “এটা অবশ্যই এক সম্মানিত কিতাব। এতে মিথ্যার প্রভাব নাই, সামনের দিক থেকেও নেই পেছন দিক থেকেও নেই। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।” (সূরা হা-মীম সাজদাহ, ৪১-৪২)
(গ-) সুস্পষ্টঃ
কুর‘আনের বক্তব্য সুস্পষ্ট এবং এর মাঝে নেই কোন অস্পষ্টতা। আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ “এমনি ভাবে আমি সুস্পষ্ট আয়াতরূপে নাজিল করেছি এবং আল্লাহ-ই যাকে ইচ্ছা হেদায়ত দান করেন।” (সূরা হাজ্ব, ১৬)
(ঘ-) পরিপূর্ণঃ
কুরআন মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে যা কিছু প্রয়োজন সবকিছুকেই শামিল করে। কারণ, কুরআন দুই জীবনের কল্যাণের সমষ্টি। আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ “আমি কিতাবে কোন কিছুই লিখতে ছাড়িনি” (সূরা আন‘আম, ৩৮)
(ঙ-) ভারসাম্যপূর্ণঃ
কুরআনের সবকিছুই ভারসাম্যপূর্ণ। যেমনঃ হিদায়াতের ক্ষেত্রে, সকল বিষয়বস্তুতে, সমস্যা দূর করণে। মানুষের আত্মা ও শরীরের মাঝের সমন্বয় সাধনে। অনুরূপ বিবেক-বুদ্ধি ও অন্তরের মধ্যে ও অধিকার ও করণীয় ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়ে ভারসাম্য বাজায় রাখে।
(চ-) আমলযোগ্যঃ
কুরআন বাস্তব আমলযোগ্য একটি কিতাব যা প্রতিটি যুগে ও স্থানে বাস্তবায়ন করার জন্য উপযুক্ত। আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ “বলুন, আমার পালন কর্তার কথা, লেখার জন্য যদি সমুদ্রের পানি কালি হয়, তবে আমার পালকর্তার কথা শেষ হওয়ার আগেই সে সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে যদিও এর সাহায্যার্থে অনুরূপ আরও সমুদ্র এনে দেওয়া হয়।” (সুরা কাহাফ, ১০৯)
(ছ-) চ্যালেঞ্জ ও মু’জিযাঃ
কুরআনের চ্যালেঞ্জ কিয়ামত পর্যন্ত বাকি থাকবে এবং বিদ্বানগণ সর্বদা কুরআনের অলৌকিকতা ও বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য উন্মোচন করে থাকেন। আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ “আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করব পৃথিবীর দিগন্তে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে; ফলে ফুটে উঠবে যে, এ কুরআন সত্য।” (সূরা হা-মীম সাজদাহ, ৫৩)
(জ-) অকাট্যভাবে সাব্যস্তঃ
কোন প্রকার বিচ্ছন্ন ব্যতীত কুরআনের বর্ণনা বিশ্বস্ত মুতাওয়াতির সূত্র দ্বারা নবী (সাঃ) থেকে সাব্যস্ত। আজ পর্যন্ত এর মাঝে এক বিন্দু সন্দেহের অবকাশ নাই। আর এ বৈশিষ্ট্য অন্য কোন আসমনী কিতবের জন্য সাব্যস্ত হয়নি। এ ছাড়া কুরআনের সংরক্ষণ দ্বীন ইসলাম চিরস্থায়ী তারই বাস্তব প্রমাণ।
(ঝ-) সংরক্ষিতঃ
কুরআন সর্বপ্রকার পরিবর্তন ও পরিবর্ধন কিংবা কম-বেশি হওয়া থেকে সম্পূর্ণভাবে সংরক্ষিত। আল্লাহ তা‘আলা নিজেই এর সংরক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ “আমিই জিকির (কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস) অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই তার সংরক্ষণকারী।” (সূরা হিজর, ৯)
 
দ্বিতীয় মূল ভিত্তি- নবী (সাঃ) এর বিশুদ্ধ হাদীসের পরিচয়ঃ

হাদীস হলোঃ যা নবী (সাঃ) থেকে প্রকাশিত হয়েছে, চাই তাঁর বাণী হোক বা কাজ কিংবা সমর্থন। নবী (সাঃ) বলেন- “আমি তোমাদের মাঝে দু’টি জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি যতক্ষণ তোমরা তা মজবুত করে আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে ততক্ষণ পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর (নবীর) সুন্নত।” (মুওয়াত্তা ইমাম মালেক) হাদীসের এ মর্যাদা ও স্থান এ জন্যই যে, সুন্নত কখনো কুরআনের বিস্তারিত বর্ণনাকারী অথবা কুরআনের যে বিষয়ে দলিল নেই সে ব্যাপারে বিধান সাব্যস্তকারী। আর এ কারণেই কুরআনে বহু স্থানে রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আনুগত্য আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যের সাথে সমন্বয় করা হয়েছে। যেমন- আল্লাহর বাণীঃ “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলুল আমর (দ্বীনি আলেম ও ইসলামী রাষ্ট্রের আমীর) তাদের। এর পর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যার্পন কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।” (সূরা নিসা, ৫৯)

নবী (সাঃ) এর হাদীসের কিছু বৈশিষ্ট্যঃ
(ক-) রাব্বানীঃ
ইহা ঐশী বাণীর দ্বিতীয় প্রকার। কারণ, অহী দুই প্রকার। (এক) অহী মাতলু তথা কুরআন। (দুই) অহী গাইর মাতলু তথা নবী (সাঃ) এর বিশুদ্ধ হাদীস। আলাহ তা‘আলার বাণীঃ “এবং তিনি (মুহাম্মদ) প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কুরআন অহী, যা প্রত্যাদেশ হয়।” (সূরা নাজম, ৪-৫)
(খ-) অবিচ্ছিন্ন যোগসূত্রঃ
সকল বিশুদ্ধ হাদীস নবী (সাঃ) পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন বিশ্বস্ত সূত্র দ্বারা সাব্যস্ত। আর এ বিশেষ বৈশিষ্ট্য একমাত্র মুসলিম জাতির জন্যই প্রযোজ্য অন্য কোন জাতির জন্য নয়। কারণ, অন্য কোন নবী বা রসূলগণের সুন্নতের যোগ্যসূত্র সাব্যস্ত নেই।
(গ-) সংরক্ষিতঃ
হাদীসের সংরক্ষণ কুরআনের সংরক্ষণের অংশ। কারণ, হাদীস কুরআনের বিস্তারিত বার্ণনাকারী ও বিধানসমূহের পূর্ণকারী।
(ঘ-) বিধিবিধান প্রণয়নে ভুল-ভ্রান্তি মুক্তঃ
কেননা হদীস অহী গাইর মাতলু। আর অহী সম্পূর্ণ ভুল-ক্রটি মুক্ত। নবী (সাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) কে হাদীস লিপিবদ্ধ করার অনুমতি দিয়ে বলেনঃ
“লেখ, যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর কসম! সত্য ব্যতীত তার (মুহাম্মদ সাঃ) থেকে অন্য কিছু বের হয় না।” (আবু দাঊদ) মনে রাখতে হবে যে, যঈফ (দুর্বল) ও জাল হাদীস দ্বারা শরিয়তের কোন বিধিবিধান প্রমাণিত হয় না। বরং তা পরিহার করা ওয়াজিব।
 
মূল দলিলের সহায়ক দলীল দু’টি
প্রথম- ইজমা‘আঃ
নবী (সাঃ) এর পরে শরিয়তের কোন নতুন সমস্যার ব্যাপারে কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসের আলোকে কোন এক সময়ের এ উম্মতের মুজতাহিদগণের ঐক্যমতকে ইজমা‘আ বলে। ইহা শরিয়তের বিধিবিধানের একটি সহায়ক দলিল তার প্রমাণ। আল্লাহর বাণীঃ “এমনি ভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমণ্ডলীর জন্যে এবং যাতে রসূল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্যে।” (সূরা বাকারা, ১৪৩) “সাক্ষ্যদাতা হও মানবমণ্ডলীর জন্যে।” ইহা তাদের আমল ও আমলের বিধিবিধান সবকিছুকেই শামিল করে। আর সাক্ষ্যদাতার কথা গ্রহণযোগ্য। নবী (সাঃ) বলেন- “আমার উম্মত কোন ভ্রষ্টতার উপর ঐক্যমত পোষণ করবে না।” (সহীহ ইবনে মাজাহ)
 
ইজমা‘আর কিছু উদাহরণঃ
নবী (সাঃ) এর মৃত্যুর পর সাহাবা কেরাম (রাঃ) গণ কুরআন কারীম একত্রে লেখার বিষয়ে ইজমা‘আ
ইসলামী সম্মেলন সংস্থা ইসলামী ফিকাহ একাডেমি ও আন্তর্জাতিক ইসলামী লীগ মক্কায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ব্যাংকের সর্বপ্রকার ফায়দা সুদের অন্তর্ভুক্ত যা শরিয়তে হারাম তার প্রতি ইজমা‘আ।
 
ইজমা‘আর প্রকারঃ ইজমা‘আ দুই প্রকার-
০১। সুস্পষ্ট ইজমা‘আঃ কোন কথা বা কাজের প্রতি সুস্পষ্টভাবে কারো দ্বিমত ছাড়াই উম্মতের কোন এক সময়ের সকল মুজতাহিদগণের ঐক্যমত হওয়া।
০২। নিরব ইজমা‘আঃ কোন মুজতাহিদের কথা বলা বা কাজ করার পর অন্যান্যরা জানার পর তার বিপরীত প্রকাশ না করা। এ ইজমা‘আর জন্য শর্ত হলো- নিরব মুজতাহিদ এ কথার প্রতি যেন অসম্মতি না জানান এবং শুনার পর গবেষণা ও দেখার জন্য যথেষ্ট সময় অতিক্রম হয়। এ ধরনের ইজমা‘আ দলিল হওয়ার ব্যাপারে জ্ঞান ও আমল ধারণা পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।
 
ইজমা‘আর জন্য শর্তাবলীঃ
০১। মুজতাহিদগণের যুগ শেষ হওয়া, যাতে করে কোন মুজতাহিদ তার মতামত থেকে ফিরে আসার সুযোগ না থাকে।
০২। এমন বিষয় ইজমা‘আ না হওয়া যে ব্যাপারে সাহাবাদের যুগে মতানৈক্য হয়েছে।
০৩। ইজমার জন্য শরিয়তের দলিল থাকা।
 
মুজতাহিদের জন্য শর্তাবলীঃ
০১। আহকাম (বিধানসমূহ) এর আয়াতসমূহের জ্ঞান থাকা।
০২। আহকাম (বিধানসমূহ) এর হাদীস সমূহের জ্ঞান থাকা।
০৩। যেসব বিষয়ে ফিকহাবিদগণ ইজমা‘আ হয়েছে সে ব্যাপারে জ্ঞান থাকা।
০৪। আরবি ভাষায় সুদক্ষ হওয়া। কারণ, কুরআন ও হাদীস আরবি ভাষায়। তাই আরবি ভাষার জ্ঞান ছাড়া বুঝা অসম্ভব।
০৫। নাসিখ (রহিতকারী কুরআন ও হাদীস সমূহ) ও মানসূখ (কুরআন ও হাদীসের রহিত বিধান সমূহ) সম্পর্কে জ্ঞান থাকা।
০৬। ফিকাহ শাস্ত্রের উসূল তথা মূলনীতিমালা সম্পর্কে জ্ঞান জরুরী।
০৭। কিয়াস সম্পর্কে জ্ঞান আবশ্যকীয়।
০৮। সৎ ও মুত্তাকী ব্যক্তি হওয়া এবং বেদাতী ও ফাসিক তথা ওয়াজিব-ফরজ ত্যাগকারী না হওয়া।
 
দ্বিতীয়- বিশুদ্ধ কিয়াসঃ
কিয়াস হলো- কোন শাখাকে আসলের সাথে দু’টির মাঝে সমন্বয়কারী কারণে সামঞ্জস্যবিধান করা। যেমন- মদ (আসল) হারামের কারণ নেশা। তাই গাঁজা ইত্যাদি সকল নেশাজাত দ্রব্য (শাখা) হারাম। কারণ এসবের মাঝে নেশা রয়েছে।
 
কিয়াস সহায়ক দলিল তার প্রমাণঃ

আল্লাহতা‘আলার বাণী- “আল্লাহ সত্যগ্রন্থ ও মীজান নাজিল করেছেন।” (সূরা শুরা, ১৭) মীজান হলো যার দ্বারা বিষয়াদি ওজন ও পরিমাপ করা যায়। নবীর (সাঃ) এর বাণী- একজন মহিলা তার মৃত মার পক্ষ থেকে রোজা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি (সাঃ) বলেন “আচ্ছা তোমার মার প্রতি কারো ঋণ থকলে সেটা কি আদায় করতে? সে বলল, হ্যঁ, তিনি (সাঃ) বললেন, অতএব তোমার মার পক্ষ থেকে রোজা কাজা করে দাও।” [বুখারী ও মুসলিম] উমর (রাঃ) আবু মূসা আশ’য়ারী (রাঃ) কে বিচার ফয়সালার ব্যাপারে এক পত্রে বলেন- “যা কুরআনে ও সুন্নাতে পাবেন না সে ব্যাপারে বিষয়গুলোর কিয়াস করবেন এবং অনুরূপ সদৃশ্য বিষয়গুলো জেনে যা আল্লাহর নিকট প্রিয় ও সত্যের সদৃশ তার অনুমোদন দেবেন।” [বাইহাকী- ১০/১১৫; দরাকুতনী- ৪/২০৬-২০৭ ও ইগাছাতুল লাহফান- ইবনুল কায়্যেম- ১/৮৬] ইমাম মুজানী বর্ণনা করেন- সাহাবীদের যুগ থেকে আমাদের যুগ পর্যন্ত ফিকাহবীদগণ এ ব্যাপারে একমত যে, সত্যের নজির সত্য এবং বাতিলের নজির বাতিল। আর তাঁরা ফিকহের সমস্ত বিধান কিয়াস প্রয়োগ করেছেন।

কিয়াসের রোকন চারটিঃ
০১। মাকিস- শাখা, যাকে তুলনা করা হয় যেমন ‘গাঁজা’।
০২। মাকিস ‘আলাইহি- আসল, যার সাথে তুলনা করা হয় যেমন ‘মদ’।
০৩। হুকুম, শরিয়তের আদেশ, দলিল বা দাবী, চাই ওয়াজিব হোক বা হারাম কিংবা সঠিক বা বেঠিক ইত্যাদি।
০৪। ইল্লাত (কারণ)- যে অর্থ দ্বারা আসলের হুকুম সাব্যস্ত হয়েছে যেমন- ‘নেশা’।
 
কিয়াসের শর্তাবলীঃ
০১। তার চেয়ে শক্তিশালী দলিলের সাথে যেন সংঘাত ও বিপরীত না হয়। তাই কিয়াস যদি কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস বা ইজমার সাথে সংঘাত হয় তবে গণ্য করা যাবে না। যেমন- একজন বিবেকবান নারীর অলি (অভিভাবক) ব্যতীত নিজের বিবাহ সম্পাদনকে বেচাকেনার হুকুমের সাথে কিয়াস করা সঠিক হবে না। কারণ বিবাহের হুকুম শক্তিশালী হাদীস দ্বার সাব্যস্ত, হুকুম হচ্ছে- “অলি ছাড়া কোন বিবাহ নাই।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)। বেচনাকেনা অলি ছাড়া বৈধ কিন্তু বিবাহ অলি ছাড়া বৈধ নয়। এই দুইটি হুকুম এক করা সহিহ হাদীসের বিপরীত তাই অবৈধ। তাই এ ধরণের কিয়াস বাতিল।
০২। আসল (মাকিস আলাইহি)- আসল মাসালার হুকুম (নাস্ব) কুরআন বা বিশুদ্ধ হাদীস বা ইজমা‘আ দ্বারা সাব্যস্ত হতে হবে। অন্য কোন ধরণের কিয়াস যার আসল কুরআন বা বিশুদ্ধ হাদীস বা বিশুদ্ধ ইজমা‘আ দ্বারা সাব্যস্ত হয় নাই সেটা বাতিল।
০৩। আসলের হুকুম যেন জানাশুনা কারণ হয়, যাতে করে তা দ্বারা আসল ও শাখাকে জমা করা সম্ভব হয়। যদি আসলের হুকুম শুধুমাত্র ইবাদতের উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে তার উপর কিয়াস করা যাবে না। যেমন- উট পাখীর মাংস খেলে ওযু নষ্ট হবে উটের মাংস খাওয়ার উপর কিয়াস করে দু’টির।
 
কিয়াসের প্রকারঃ কিয়াস দুই প্রাকার-
(ক-) সুস্পষ্ট কিয়াস-
যার কারণে নাস্ব অর্থাৎ কুরআন বা বিশুদ্ধ হাদীস বা ইজমা‘আ কিংবা আসল ও শাখার মাঝে পার্থক্য নাই যথা-যথ কারণ দ্বারা নিশ্চিতভাবে সাব্যস্ত।
(খ-) সূক্ষ্ম কিয়াস-
যার কারণ গবেষণা দ্বারা সাব্যস্ত এবং আসল ও শাখার মাঝে পার্থক্য নিশ্চিতভাবে সাব্যস্ত না।
 

নবী-রসূলগণের দা‘আওয়াতের উসূল (মূলনীতি)

সমস্ত নবী-রসূলগণের দা‘আওয়াতের উসূল চারটিঃ
০১। তাওহীদ।
০২। নবুয়াত ও রিসালত
০৩। তাকওয়া
০৪। আখেরাত।

আল্লাহতা‘আলার সমস্ত নবী-রসূলগণ নিজ নিজ উম্মতকে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা এবং তাওয়হীদের বিপরীত শিরক থেকে বাঁচার জন্য নির্দেশ করেছেন। আর ইহা হলো তাওহীদের মূল কথা যা আল্লাহর হক। আর সর্বপ্রকার ইবাদত একমাত্র নবী-রসূলদের তরীকায় আদায় কারার জন্য আদেশ দিয়েছেন যা নবুয়াত ও রেসালাতের মূল। এছাড়া আল্লাহতা‘আলা ও নবী-রসূলগণের আদেশ-নিষেধ পালন করাই হলো তাকওয়া। আর উপরের তিনটি উসূলের উপর নির্ভর করবে আখেরাত। সঠিকভাবে পালন করলে আখেরাতে জান্নাত আর না করলে জাহান্নাম। সকল নবী-রসূলগণ এ চারটি উসুল দ্বারাই দা‘আওয়াত ও তাবলীগ করেছেন। পূর্ণ দ্বীন ইসলাম এই চার উসূলের মাঝেই কেন্দ্রীভূত। সর্বপ্রথম রাসূল নূহ (আঃ) কে আল্লাহতা‘আলা এই চারটি উসূল দ্বারাই প্রেরণ করেন। আল্লাহতা‘আলার বাণীঃ

إِنَّآ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلىٰ قَومِهٖٓ أَنْ أَنْذِرْ قَوْمَكَ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَّاتِيَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ (1) قَالَ يٰقَوْمِ إِنِّى لَكُمْ نَذِيْرٌ مُّبِيْنٌ (2) أَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاتَّقُوهُ وَاَطِيْعُونِ (3) يَغْفِرْ لَكُمْ مِّنْ ذُنُوبِكُمْ وَيُؤَخِّرْكُمْ إِلٰٓى أَجَلٍ مُّسَمًّ، إِنَّ أَجَلَ اللهِ إِذَا جَٓاءَ لَايُؤَخَّرُ , لَوْكُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (نوح 1 – 4)

“আমি নূহ্কে প্রেরণ করেছিলাম তার জাতির নিকট এ কথা বলে যে, তাদের প্রতি যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি আসার আগেই তুমি তোমার জাতিকে সতর্ক কর। সে বলল, হে আমার জাতি! আমি তোমাদের জন্যে স্পষ্ট সতর্ককারী। এ বিষয় যে, তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং নির্দিস্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহর নির্দিষ্টকাল যখন আসবে, তখন আর অবকাশ দেয়া হবে না, যদি তোমরা তা জানতে।” [সূরা নূহ, ১-৪] আল্লাহ তা‘আলা প্রথম ও দ্বিতীয় আয়াত এবং চতুর্থ আয়াতে আখেরাত উসুল উল্লেখ করেছেন। আর তৃতীয় আয়াতে তিনটি উসুল তথা তাওহীদ, তাকওয়া ও রিসালাত উল্লেখ করেছেন। দা‘আওয়াতের ময়দানে যারা কাজ করছেন তাদেরকে এ চারটি উসূলের প্রতি গুরুত্ব দেয়া অতীব জরুরী। নিম্নে চারটি উসূলের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হল।

প্রথম- তাওহীদঃ

নবী-রসূলগণ তাঁদের জাতিকে সকল ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য করা এবং কোন প্রকার ইবাদত আল্লাহ ছাড়া অন্য কার জন্য না করার দা‘আওয়াত করেন। যেমন- বিভিন্ন নবী-রসূলগণের দা‘আওয়াত সম্পর্কে আল্লাহতা‘আলার বাণী-

لَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوحًا اِلٰى قَوْمهٖ فَقَالَ يٰقَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَالَكُمْ مِنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗ، اِنِّىٓ اَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ(اعراف – 95)

“আমি নূহ্কে তার জাতির নিকট প্রেরণ করেছিলাম, অতএব তিনি বললেন, হে আমার জাতি! তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর তাঁর সাথে অন্য কাহাকেও সামিল কর না, আমি এক কঠিন দিবসে তোমাদের উপর শাস্তির আশংকা করছি।” [সূরা আরাফ, ৫৯] [ঠিক এমন সূরা আছে, সূরা আরাফ- ৬৫, ৭৩, ৮৫, সূরা হূদ- ৫০, ৬১, ৮৪, সূরা মুমিনূন- ২৩]

দ্বিতীয়- নবুয়াত ও রেসালাতঃ
নবূয়্যাত শব্দ থেকে নবী যার অর্থ খবরদাতা এবং রেসালত শব্দ থেকে রসূল যার অর্থ পত্রবাহক বা দূত। নবী-রসূলগণ (আঃ) আল্লাহ‘আলার পক্ষ থেকে খবরদাতা ও দূত। নবী-রসূলগণ (আঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে যা প্রচার করতেন তার অনুগত্য করা জন্য দাওয়াত করেন। প্রতিটি নবী-রসূল নিজ নিজ জাতিকে তাঁদের আনুগত্য করার জন্য নির্দেশ এবং নাফরমানি করতে নিষেধ করেন। রেসালাতের মর্মার্থ হলো- এক আল্লাহর ইবাদত শুধুমাত্র সে নবী বা রসূলের তরীকা (মানহাজ্ব, পদ্ধতি) ছাড়া আর অন্য কোন তরীকা দ্বারা করা যাবে না। আর করলেও তা আল্লাহর নিকট গ্রহণ যোগ্য হবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা নিম্নে আয়াত সমূহে বলেন-
فَتَوَلّٰى عَنْهُمْ وَقَالَ يٰقَوْمِ لَقَدْ اَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّى وَنَسَحْتُ لَكُمْ وَلٰكِنْ لَّاتُحِبُّونَ النّٰصِحِيْنَ (اعراف – 97)
(ক) “সালেহ তাদের থেকে প্রস্থান করলো এবং বলল- হে আমার জাতি, আমি তোমাদের কাছে স্বীয় প্রতিপালকের পয়গাম (রেসালত) পৌঁছিয়েছি এবং তোমাদের মঙ্গল কামনা করছি কিন্তু তোমরা মঙ্গলাকাঙ্খীদেরকে ভালবাস না।” [সূরা আ’রাফ- ৭৯]
يٰٓاَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَٓا اُنْزِلَ اِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ، وَاِنْ لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهٗ، وَاللهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ، اِنَّ للهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْكَفِرِيْنَ (مائدة – 76)
(খ) “হে রসূল! আপনার প্রতি আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা আপনি পৌঁছায়ে দিন। যদি আপনি এরূপ না করেন তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।” [সূরা মায়েদা- ৬৭]
قُلْ يٰٓاَيُّهَا النَّاسُ اِنِّى رَسُولُ اللهِ اِلَيْكُمْ جَمِيْعًا الَّذِى لَهٗ مُلْكُ السَّمٰوٰتِ وَلْاَرْضِ، لَٓااِلٰهَ اِلَّاهُوَ يُحْىٖ وَيُمِيتُ، فَاٰمِنُوا بِاللهِ وَ رَسُولِهِ النَّبِىِّ الْاُمِّىِّ الَّذِى يُؤْمِنُ بِاللهِ وَ كَلِمٰتِهٖ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ (اعراف – 851)
(গ) “বলুন! হে মানুষ, তোমাদের সকলের প্রতি আমি আল্লাহর রসূল, আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই তাঁর, তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নাই তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান, অতএব তোমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সেই রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর যিনি উম্মি এবং তিনি বিশ্বাস স্থাপন করেছেন আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর কালেমার প্রতিও আর তার আনুগত্য কর, সম্ভবত তোমরা সঠিক পথ পাবে।” [সূরা আ’রাফ- ১৫৮]
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ اَبَٓا اَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَّسُولَ اللهِ وَخَاتَمَ النَّبِيّٖنَ، وَكَانَ اللهُ بِكُلِّ شَئٍ عَلِيمًا (احزاب – 04)
(ঘ) “মুহাম্মাদ তোমাদের কোন ব্যক্তির বাবা নন, বরং তিনি আল্লাহর রসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।” [সূরা আহজাব- ৪০]
فَاِنْ كَذَّبُوكَ فَقَدْ كُذِّبَ رُسُلٌ مِّنْ قَبْلِكَ جَٓاءُو بِالْبَيَّنٰتِ وَالزُّبُرِ وَلْكِتٰبِ الْمُنِيْرِ (عمران – 481)
(ঙ) “তাছাড়া এরা যদি আপনাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তবে আপনার পূর্বেও এরা এমন বহু নবীগণকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, যারা নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছিলেন এবং এনেছিলেন সহীফা ও প্রদীপ্ত গ্রন্থ।” [আল এমরান- ১৮৪]
يٰمَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ اَلَمْ يَاتِكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ اٰيٰتِى وَيُنْذِرُونَكُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هٰذَا، قَالُوا شَهِدْنَا عَلٰٓى اَنْفُسِنَا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيٰوةُ الدُّنْيَا وَشَهِدُوا عَلٰٓى اَنْفُسِهِمْ اَنَّهُمْ كَانُوا كٰفِرِيْنَ (انعام – 031)
(চ) “হে জ্বিন ও মানব সম্প্রদায়, তোমাদের কাছি কি তোমাদের মধ্য থেকে রসূল আগমন করেননি, যাঁরা তোমাদেরকে আমার বিধানাবলী বর্ণনা করতেন এবং তোমাদেরকে আজকের এ দিনের সাক্ষাতের ভীতি প্রদর্শন করতেন? তারা বলবে, আমরা স্বীয় পাপ স্বীকার করে নিলাম। পার্থিব্য জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে। তারা নিজেদের বিরুদ্ধে অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে যে, তারা কাফের ছিল।” [সূরা আন’আম- ১৩০]
وَسِيْقَ الَّذِيْنَ كَفَرُوٓا اِلٰى جَهَنَّمَ زُمَرًا، حَتّٰٓى اِذَا جَٓاءُوهَا فُتِحَتْ اَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَٓا اَلَمْ يَاتِكُمْ رُسُلٌ مِّنْكُمْ يَتْلُونَ عَلَيْكُمْ اٰيٰتِ رَبِّكُمْ وَيُنْذِرُونَكُمْ لِقَٓاءَ يَوْمِكُمْ هٰذَا، قَالُوا بَلٰى وَلٰكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَى الْكٰفِرِيْنَ (زمر – 17)
(ছ) “কাফেরদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে হাঁকিয়ে নেয়া হবে। তারা যখন সেখানে পৌঁছবে, তখন তার দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে রসূল আসেননি, যারা তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করতেন এবং সতর্ক করতেন এ দিনের সাক্ষাতের ব্যাপারে? তারা বলবে, হাঁ, কিন্তু কাফেরদের প্রতি শাস্তির বিধানই বাস্তাবাইত হয়েছে।” [সূরা যুমার- ৭১]
আর এ জন্যে কোন কাফের সুসলিম হতে চাইলে এক আল্লাহর সাক্ষ্য দেওয়ার সাথে সাথে নবীর রসালতের সাক্ষ্য না দেওয়া পর্যন্ত মুসলিম হতে পারবে না।
قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعُونِى يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْلَكُمْ ذُنُوبَكُمْ، وَاللهُ غَفُورٌ رَّحِيْمٌ (عمران – 13)
(জ) “বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দায়ালু।” [সূরা আল-ইমরান- ৩১]
 

পৃষ্ঠা – ১
পৃষ্ঠা সমূহে যাও –    

© 2020 - Dawah wa Tablig