সূরা নং ১, আয়াত সংখ্যা ৭ টি, মাক্বী
ব্যাখ্যাঃ বিসমিল্লাহর পূর্বে ‘আক্বরাউ ‘আবদাউ আথবা ‘আতলু’ ফে’ল (ক্রিয়া) উহ্য আছে। অর্থাৎ, আল্লাহর নাম নিয়ে পড়ছি অথবা শুরু করছি কিংবা তেলঅত আরম্ভ করছি। প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আরম্ভ করার পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ার প্রতি তাকীদ করা হয়েছে। সুতরাং নির্দেশ করা হয়েছে যে- খাওয়া, যবেহ করা, ওযু করা এবং সহবাস করার পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়। অবশ্য কুরআন মাজিদ তেলঅত করার সময় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রহীম’ পড়ার পূর্বে ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশশায়ত্বানির রাজীম’ পড়াও অত্যাবশ্যক। মহান আল্লাহ বলেছেন, “অতএব যখন তুমি ক্কুরআন পাঠ করবে, তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর।” (সূরা নাহল ১৬:৯৮ আয়াত।)
ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ ۞
সকল প্রশংসা১ জগৎ সমূহের প্রতিপালক একমাত্র আল্লাহর জন্য।২
ব্যাখ্যাঃ ১الحمد এর মধ্যে যে ال রয়েছে, তা استغراق (সমূদয়) অথবা اختصاص (নির্দিষ্টীকরণ) এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যই বা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট; কেননা প্রশংসার প্রকৃত অধিকারী একমাত্র মহান আল্লাহই। কারো মধ্যে যদি কোন গুণ, সৌন্দর্য এবং কৃতিত্ব থাকে, তবে তাও মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। অতএব প্রশংসার অধিকারী তিনিই। ‘আল্লাহ’ শব্দটি মহান আল্লাহর সত্তার এমন এক সতন্ত্র নাম যার ব্যবহার অন্য কারো জন্য করা বৈধ নয়। ‘আলহামদুলিল্লাহ’ কৃতজ্ঞতা-জ্ঞাপক বাক্য। এর বহু ফযীলতের কথা হাদীসসমূহে এসেছে। একটি হাদীসে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’কে উত্তম জিকির বলা হয়েছে এবং ‘আলহামদুলিল্লাহ’ কে উত্তম দুঅ বলা হয়েছে। (তিরমিযী, নাসায়ী ইত্যাদি) সহীহ মুসলিম এবং নাসায়ীর বর্ণনায় এসেছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ দাঁড়িপাল্লা ভর্তি কের দেয়। এ করণে যে, প্রত্যেক পানাহারের পর বান্দা তাঁর প্রশংসা করুক। (সহীহ মুসলিম)
ব্যাখ্যাঃ ২رَبّ মহান আল্লাহর সুন্দর নাম সমূহের অন্যতম। যার অর্থ হল, প্রত্যেক জিনিসকে সৃষ্টি করে তার প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবস্থা করে তাকে পরিপূর্ণতা দানকারী। কোন জিনিসের প্রতি সম্বন্ধ (ইযাফত) না করে এর ব্যবহার অন্য কারো জন্য বৈধ নয়। عَالَمين (বিশ্ব-জাহান) শব্দের বহুবচন। তবে সকল সৃষ্টির সমষ্টিকে عَالم বলা হয়। এই জন্যেই এর বহুবচন ব্যবহার হয় না। কিন্তু এখানে তাঁর (আল্লাহর) পূর্ণ প্রতিপালকত্ব প্রকাশের জন্য এরও বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। এ থেকে উদ্দেশ্য হল, সৃষ্টির ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণী বা সম্প্রদায়। যেমন, জ্বিন সম্প্রদায়, মানব সম্প্রদায়, ফিরস্তাকুল, জীব-জন্তু ও পশু-পক্ষীকুল ইত্যাদি। এই সমস্ত সৃষ্টির প্রয়োজনসমূহ একে অপর থেকে অবশ্যই ভিন্নতর। কিন্তু বিশ্ব-প্রতিপালক প্রত্যেকের অবস্থা, পারিস্থিত এবং প্রকৃতি ও দেহ অনুযায়ী তার প্রেয়াজনীয় জিনিসের ব্যবস্থা করে থাকেন।
© 2020 - Dawah wa Tablig